এইচএসসিতে অটোপাস: তবুও অসন্তোষ একাংশের

ফল দেখছেন এক শিক্ষার্থী
ফল দেখছেন এক শিক্ষার্থী  © ফাইল ফটো

সদ্য ঘোষিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাই পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়েছে পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ। তাদের অভিযোগ, প্রকাশিত ফলে তারা বঞ্চিত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আমেনা আক্তার। তিনি জেএসসিতে জিপিএ ৪.৮৫ এবং এসএসসিতে ৪.৩৯ পেয়েছেন। তার এইচএসসির ফল আসল ৪.২৫। অন্যদিকে আগের দুটিতে তার থেকে কম জিপিএ নিয়ে এইচএসসিতে বেশি জিপিএ পেয়েছেন তার বন্ধু রহিমা। রহিমা জেএসসিতে পেয়েছেন ৪.০০ আর এসএসসিতেও একই জিপিএ। তার এইচএসসির রেজাল্ট আসল ৪.৩৩।

আমেনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, এই পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয়নি। আমরা এমনটা আশা করিনি।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে শিক্ষার্থী লোকমান অভিযোগ করে বলেন, আমি জেএসসিতে ৩.০৬ এবং এসএসসিতে ৩.১০ পেয়েছি। এখন আমার এইচএসসির ফল আসল ৩.৩৩। অন্যদিকে আমার কাজিন জেএসসিতে ৪.৫৮ এবং এসএসসিতে ৩.৭০ পেলেও এইচএসসিতে তার ৩. ২৫ এসেছে। ফল প্রকাশের পুরো প্রক্রিয়া তার কাছে স্পষ্ট না বলেও জানান তিনি।

সাজ্জাদ আমিন নামে এক শিক্ষার্থীর বক্তব্য, তার জেএসসিতে ৪ .৬৫ এবং এসএসসিতে ৪.১১ থাকলেও প্রকাশিত ফলাফলে তিনি ৪.০০ পেয়েছেন।

শেখ হাসান নামে বরিশাল বোর্ডের এক পরীক্ষার্থী জানান, তিনি জেএসসিতে ৫.০০ এবং এসএসসিতে ৪.১১ পেয়েছিলেন। আজকের প্রকাশিত ফলে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

মূলত এসব বিষয় নিয়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক সদ্য প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে সামালোচনা করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকেই। ‍ তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় এবার জেএসসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে। এখানে ভুলের অবকাশ নেই। তবে কেউ যদি নিজের রেজাল্ট নিয়ে সন্দেহে থাকেন, তবে তার রিভিউ করার সুযোগ আছে।

সাধারণভাবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

যেভাবে এইচএসসি/সমমান পরীক্ষার বিষয় ম্যাপিং হলো

১) সাধারণভাবে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার ৭৫% বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসি-২০২০ এর ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে;

২) জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫% বিবেচনা করে এইচএসসিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে;

৩) বিজ্ঞান গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫% নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে;

৪) ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগােত্রীয় বিষয়ের ৭৫% নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিনটি সমগােত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

৫) মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫% নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে;

৬) গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি/সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫% ও এসএসসি/সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পরপর তিনটি বিষয়ের ৭৫% নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে;

৭) জিপিএ উন্নয়নের ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে;

৮) আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর প্রদানের ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।