বইমেলায় আসছে চবি শিক্ষার্থী নাহিদা ইসলামের কাব্যগ্রন্থ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী নাহিদা ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নিঃশব্দের মিছিল’ আসছে এবারের বইমেলায়। বইটি প্রকাশিত হচ্ছে পরাপাঠ প্রকাশনী, ঢাকা থেকে।
তুমুল কোলাহলে সামাজিক বেষ্ঠনীতে থেকেও মানুষ নিঃসঙ্গ। থেমে নেই দীর্ঘশ্বাসের অনিঃশেষ যাত্রা। হৃদয় দিয়ে কেনা প্রেমের অপর পৃষ্ঠে ছলনা। যে চোখের ইশারায় নিজেকে হারিয়েছি, সেখানে খেলা করে শৈল্পিক প্রতারণা। রাষ্ট্রের কাঠগড়ায় প্রেম-প্রেমিক। বিশ্বায়নের বাজার নিলামে তুলে শরীর। সরকারি নামে ‘কালো’ হয় ‘সাদা’। মুণ্ডুহীন মানুষের কাঁধে চড়ে রাষ্ট্র।
জমজমাট প্রতারণার হাটে শূন্য হয়ে ফিরে শুদ্ধ প্রেমিক। বাউল বাতাস উড়ে আর কাঁদে। জীবনানন্দের পাখিরা ঘরে ফেরে না। সবখানে বিকৃত রসনার রসুইঘর। এমন শূণ্যতা, অপ্রাপ্তি, অপ্রেম, প্রকৃতিনাশ, অভিমান, আঁধার আর দুঃস্বপ্ন তাড়াতে প্রত্যয়গাঁথা স্বপ্নবাহী ভোরের আলোর মতো সুন্দরের প্রত্যাশায়- ‘নিঃশব্দের মিছিল’।
প্রতিবাদের আগুনপোড়া শব্দরাজি দিয়ে তৈরি নাহিদা ইসলামের কবিতা। বিরহের শিল্পবন্দনা তুমুল ঝঙ্কার তুলে হিমছড়িঝর্ণার মতো। নিঃশঙ্ক কণ্ঠে তাই শুনি, ‘নারীটা স্নান সেরে পতিতা/আর পুরুষটা স্নান সেরে সমাজপতি’। এ যেন ‘কানার হাটবাজার’।
সমাজ শুদ্ধ হলে, বিবেকের আলোয় পথ চললে মন হবে পবিত্র আর অভিযোগমুক্ত হবে রাষ্ট্র। দীর্ঘ মিছিলে নিঃশব্দ প্রতিটি মানুষ। পীড়িতের চিৎকারে সংবিধানের শব্দাবলি খসে পড়লে লজ্জা পাবে রাষ্ট্র। তবে এ মিছিলে প্রতিটি নিঃশ্বাস কখনো ধীর-শান্ত, কখনো অভিমানী-অশান্ত আবার কখনো সাক্ষাৎ প্রলয়ধ্বনি। আবেগের শুদ্ধতা, ক্ষোভের বুদবুদ, বিবেকের অগ্নিশিখা, প্রকৃতির অনাবিল সবুজ, উদাসী মনের ঘরে ফেরার তাগিদ নিয়েই ‘নিঃশব্দের মিছিল’।
সামাজিক চোখরাঙ্গানি, বিকৃত পুঁজির রঙবদল, সাধুবেশে খল, ডাস্টবিন যেন শিশুর দোলনা, সড়কে প্রাণহানি যেন নিয়তি, ফুটপাত যেন আঁতুড়ঘর, এদেশে আগস্ট আসে শোকের বারতা নিয়ে, ঝিমোয় আফিমখোর সমাজপতি। এ যেন তাল-বেতালের কারখানা।
গলায় চন্দ্রহার নিয়ে ‘চরণেরা হেঁটে যায় মুণ্ডুহীন’। সবাই বিভোর নিরপেক্ষতার ভানে। ঠিক এখানে নাহিদা ইসলাম নিরপেক্ষ না থেকে ন্যায়ের পক্ষ নিয়েছে। তাই বলতে পেরেছে, ‘বিদঘুটে সব হতাশা জাপটে ধরে আপাদমস্তক/স্মৃতিরা আলো হয়ে উঠে যেন চারিপাশ ঘিরে/আমি নিঃশব্দের মিছিলে চিৎকার করি’। ভাবতে ভালো লাগে ‘নিঃশব্দের মিছিল’-এ আমিও বিরামহীন সারথি। কবি ও কবিতার জয়ী হোক।
চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর লেখালেখিতে হাতেখড়ি হয় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়ই। লেখালেখিতে তার রয়েছে তুমুল আগ্রহ। স্বপ্ন দেখেন, পৃথিবীটা বইয়ের হবে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি।