ভিসিরা স্বৈরাচারের মতো আচরণ করছেন: আসিফ নজরুল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল অভিযোগ করে বলেছেন, আমাদের ভিসিদের ছোটখাটো বিচ্যুতি এর আগেও দুয়েকটা ক্ষেত্রে ছিল। কিন্তু, এত ব্যাপক মাত্রায়, যে একজন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেনই না, যা ইচ্ছা তাই করছেন, ইচ্ছামতো বহিষ্কার করছেন, স্বৈরাচারের মতো আচরণ করছেন, এটা আমরা আগে দেখিনি।
সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়, আমাদের দলীয় রাজনীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, ভিসিরা হয়তো ভাবেন, তারা দলগতভাবে অত্যন্ত অনুগত থাকলে যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন। এটার প্রকাশ আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখছি, সবক্ষেত্রে না।
তিনি বলেন, তারা দলীয় আনুগত্য বজায় রেখে স্বেচ্ছাচারিতা করার লাইসেন্স পেয়ে গেছেন বলে মনে করছেন। এখন এটার তো রাশ টেনে ধরতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, চ্যান্সেলরের অফিস আছে, তারা যদি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে পরিশেষে এ ধরনের স্বৈরাচারিতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্যই তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
জবাবদিহিতার অভাবে এমনটি হচ্ছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, এখানে আরেকটা বিষয় হলো, প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির বাইরে একটা অপ্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিও ছিল উপাচার্যদের। সেটা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-ছাত্রদের ভিন্ন মত প্রকাশ করার অধিকার, আন্দোলন করার অধিকার। এখন সার্বিকভাবে দেশে আন্দোলন করার, ভিন্নমত পোষণ করার, সমালোচনা করার অধিকার এত সংকুচিত হয়ে গেছে যে, উপাচার্যরা এখানেও এক ধরনের প্রশ্রয় বা দায়মুক্তি অনুভব করেন যে, আমাদেরকে কেউ কিছু বলবে না।
তিনি আরও বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এসব করছেন, শিক্ষক-ছাত্রদের অবশ্যই নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। একইসঙ্গে মূল দায়িত্বটা সরকারের। এত সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে, এত কিছু হচ্ছে, এরপরেও যদি সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে একটি বার্তাই যায় যে, উপাচার্যরা দলীয়গতভাবে অনুগত থেকে যা ইচ্ছা করতে পারবে। যদি সরকার এই বার্তা দিতে থাকে, তাহলে তো এরকম ঘটতেই থাকবে। সরকার যদি এ বার্তা দেওয়া বন্ধ করতে চায়, তাহলে অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যথায় এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে একটা কথাই আছে যে, যখন দায়বদ্ধতা থাকে না, তখন মানুষ অতিরিক্ত স্বৈরাচারী হয়ে যায়, অতিরিক্ত স্বৈরাচারী আচরণ করে। এটা তো সারা পৃথিবীতে সমাজ-অপরাধ বিজ্ঞানে প্রচলিত সত্য। দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। উপাচার্য মানে রাজা না। উপাচার্য মানে স্বেচ্ছাচারিতা না। এত বড় একটা পদের গুরুত্ব-মর্যাদা যারা বুঝতে পারেন না, তারা কীভাবে উপাচার্যের পদে থাকবেন?