০২ জানুয়ারি ২০২১, ২১:১২

ঢাবির শতবর্ষ পূর্তির বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যত প্রত্যাশা

ঢাবির শতবর্ষের লোগো  © লোগো

চলতি বছরের ১ জুলাই শতবর্ষ পূর্ণ হবে প্রচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২১ সালের পাতা উল্টানোর শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশা ও দাবির কথা জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন, কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে সৃষ্ট একাডেমিক ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং আরও বেশি পরিমাণে গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির ওপর জোর দিয়েছেন।

ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষক-শিক্ষার্থী বান্ধব পরিবেশের সাথে সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অতীত রয়েছে এবং এটি জাতির সেবা করে চলেছে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি সব বদলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মহামারি আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। মহামারি পরবর্তী সময়ে আমি আশা করি শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা একসাথে মেধা ও ভালোবাসার সাথে জাতির কল্যাণে কাজ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন জ্ঞান ও গবেষণার ওপর জোর দেয়া উচিত।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের কথার প্রতিধ্বনি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গবেষণা করা জরুরি। সেইসাথে আমাদের বিশ্বমানের সাহিত্যের বাংলা সংস্করণ প্রকাশ ও অনুবাদে মনোনিবেশ করা উচিত। নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

অপর্যাপ্ত ছাত্রাবাসের কথা উল্লেখ করে এ অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যা আবাসন। কর্তৃপক্ষের এটি প্রথমে নিশ্চিত করা উচিত। সেইসাথে হলের সংস্কার করাও প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি ভবন অরক্ষিত এবং শিক্ষার্থীরা শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছে।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনটি নিয়মিত হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের বুদ্ধি-জ্ঞান বাড়ানোর জন্য সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। ডাকসুর মতো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সংগঠন ছাড়া কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো হতে পারে না।

ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একশ বছরে পা রাখতে চলেছে। শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমরা বিশ্বের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের নিয়ে কয়েকটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছি। সুতরাং আমি আশা করি এটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একভাবে বলা চলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। তবে গবেষণা এবং জ্ঞান তৈরিতে আমরা পিছিয়ে আছি।

গবেষণায় পিছিয়ে থাকার জন্য শিক্ষক রাজনীতিকে দোষারোপ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা গবেষণায় চেয়ে রাজনীতিতে বেশি মনোযোগী। শিক্ষকদের জন্য দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত।

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ অধ্যাপক বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ডাকসু নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হওয়া উচিত। মেধাবী শিক্ষার্থীদের ডাকসু নেতৃত্বে আসা উচিত, রাজনীতিবিদের নয়।

আবাসনের বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা। তাই ছাত্রাবাসের বাইরে থাকা তাদের জন্য কঠিন।

ঢাবির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন ছাত্রাবাস তৈরিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান নিয়েছে। আমি আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা দ্রুত বাস্তবায়ন করবে,যোগ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার এবং তা আদায়ের জন্য প্রতিবাদ করারও আহ্বান জানান তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকও আবাসনের সমস্যাকে প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আবাসিক হলগুলো পুনরায় চালু করে দেয়ার দাবি জানান তিনি।

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নেয়া মাস্টার প্ল্যান দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন।

মহামারিজনিত কারণে হওয়া একাডেমিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সেশনজট এড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাদ্দাম আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের বছরে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছর ২০২১ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।

সাদ্দাম বলেন, সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ করা উচিত এবং এসব কোর্স বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের করপোরেট প্রতিষ্ঠান হয়ে যাওয়া উচিত হবে না।

ঢাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিব হাসান বলেন, আমি আশা করি মহামারিজনিত কারণে আমাদের যে একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কমাতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া এক বছরের ক্ষতি কমাতে শিক্ষকদের বিশেষ যত্নশীল হতে হবে।

ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতির কথা উল্লেখ করে ছাত্রদল নেতা আশা প্রকাশ করেন যে নতুন বছরটি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সহাবস্থানের বছর হবে, যাতে নির্ভীক পরিবেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করার জন্য মানসম্পন্ন গবেষণা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। রাজনীতিতে নয় শিক্ষকদের গবেষণায় বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন মাহি বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা আবাসন। নতুন বছরে হলের সংকট সমাধান হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করা।

ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক স্থান সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে জানিয়ে মাহি অবিলম্বে একটি বিশ্বমানের ও বড় গ্রন্থাগার তৈরি করা উচিত বলে জানান।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ২০২০ সালের সব বাধা অতিক্রম করে নতুন বছর সম্ভাবনার এক বছর হবে।

নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, মুজিববর্ষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র: ইউএনবি