৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:০৫

একুশে আসুক বাসন্তী সাজ, ফের মেতে উঠুক প্যারিসের বুক

স্বাভাবিক সময়ে প্রাণবন্ত রাবি ক্যাম্পাস  © ফাইল ফটো

রাত পোহালেই একুশের ছোঁয়া পাবে বিশ্ব। স্মৃতির পাতায় ইতিহাস হয়ে থাকবে ২০২০ সালের ফেলে আসা দিনগুলো! আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিসাব চুকিয়ে ফের নবযাত্রায় যোগ দেবে বিশ্ব। আর সেই যাত্রার সঙ্গ দিয়ে ফের নবরূপে সাজতে চায় মতিহারের নীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রাঙ্গণ।

বছর ধরে মনের অতল গহবরে জমে থাকা সকল পূর্ণতা-অপূর্ণতা, আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট এবং একাকিত্বে ভরা হতাশার গ্লানি ভুলে নতুন বছরে ফের বাসন্তী সাজে সাজতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যেখানে গগনচুম্বী গাছে মোড়ানো চিরচেনা প্যারিস রোডের বুক ফের মেতে উঠবে উৎসবের আমেজ। টুকিটাকি চত্বরটি ফের হাসি-তামাশা ও খুনসুটিতে ভরে যাবে। পড়ে থাকবে না ইবলিশ চত্বরে যুগলদের পদচারণা! মেতে উঠবে পুকুরপাড়টি তাদের বহুল প্রতীক্ষিত আড্ডা আসরে!

বিকেল গড়াতেই শহীদ মিনারের মুক্তমঞ্চে জমবে আড্ডার আসর। পিছনের রাকসু ভবন থেকে ভেসে আসবে ফের গান-বাজনা ও নাটকের মহড়ার আওয়াজ। শীতের তিক্ততা কাটিয়ে ৭৫৩ একরের নীলাভূমি ফের বাসন্তী সাজে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পাস জুড়ে ফুলের সুবাসে এভাবেই ভালবাসার দ্রুতি ছড়াক নতুন বছরে এমন প্রত্যাশা রাবি শিক্ষার্থীদের।

জরাজীর্ণ গ্লানিকে মুছে একুশে নতুন সম্ভাবনা পালক উন্মোচিত হোক এমন প্রত্যাশা করে রাবি শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী বলেন, ‘ফেলা আসা বছরটি মানুষকে শিখিয়েছে অনেক কিছু। ঘর ও প্রকৃতি বিমুখ মানুষগুলো বুঝতে শিখেছে এই সমাজ ও পৃথিবীর কাছে তারা কতটুকু ঋণী। করোনা মহামারিতে শিল্প, শিক্ষা, পর্যটন ও স্বাস্থ্য খাতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেললেও শিখিয়েছে আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে নবরূপে গড়ে উঠার কথা। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসবিহীন জীবন আজ বড়ই উতলা বই-খাতা হাতে ক্লাস, কর্মব্যস্ততা ও আড্ডায় ফিরবে বলে।’ ফেলে আসা সকল গ্লানি ভুলে প্রাণের ক্যাম্পাস ফের হয়ে উঠুক সকলের মিলন মেলা, নতুন বছরে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

নতুন বছরে নবরূপে নিজেকে মেলে ধরার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নবনীতা রায় বলেন, ‘মাস্কে ঢাকা এই বছরটাকে বিভীষিকাময় বলে আখ্যায়িত করতে আজ বড্ড মন চায়! কেননা এ বছর সবার মত আমরও প্রাপ্তির চেয়ে অপূর্ণতার পাল্লাই ভারী। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাই নয়, দক্ষতা অর্জনের পথও হয়েছে রূদ্ধ। এসবের মাঝেও বড় প্রাপ্তি হচ্ছে আত্মবিশ্বাস অর্জন। নতুন বছরে আত্মবিশ্বাসের এ ধারাটি সমুন্নত রেখে নিজেকে নবরূপে মেলে ধরতে চাই প্রাণের চির সবুজ নীলাভূমিতে।’ করোনাকে দূরে ঠেলে একটি সুস্থ সকালে ফের সমস্বরে প্রাণ খুলে হাসতে চাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী।

স্বপ্নের পথে স্বপ্নিল আগামী তৈরীর প্রত্যয় ব্যক্ত করে আরেক শিক্ষার্থী কামিল আহমেদ বলেন, ‘দুনিয়া কাঁপানো ক্ষুদ্র এক অণুজীবের প্রাদুর্ভাবে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। এদিকে জীবনাচারে ব্যাপক পরিবর্তনে বাধ্য করা জীবনসংহারী করোনা স্বপ্নের ক্যাম্পাসে ঠিকঠাক বিচরণই করতে দেয়নি বছরজুড়ে। গ্রীষ্মের নিদাঘ বিকেলে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে জম্পেস আড্ডা ও শরৎকালে রকমারি বাহারি পিঠাপুলির উৎসবের আমেজ সবই যেন আজ সপ্নময়। কেবল ঘরবন্দী জীবনের দীর্ঘশ্বাস। তবুও সুস্থ থাকার তৃ্প্তির ঢেঁকুর তুলে নতুন প্রত্যাশার পারদ- একুশে পৃথিবীতে হোক নতুন সূর্য উদয়। ফের স্বপ্নের পথে স্বপ্নিল আগামী তৈরীতে হবো ব্যস্ত। এমন এক নতুন বসুধার প্রতীক্ষায়।’

নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ক্যাম্পাস দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসবিহীন করোনার এক বিভীষিকাময় সময় পার করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরটি যেন আজ ফুল ছাড়া বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।’ নতুন বছরে বিশ্ব আবার করোনামুক্ত হোক এবং সুস্থভাবে সকল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরে তাদের প্রাণের মতিহার চত্বরকে মুখরিত করুক, সেই প্রত্যাশা করেন তিনি।