ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে জোরালো হচ্ছে হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার দাবি

ঢাবির হল খুলে দেয়ার দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের অবস্থান
ঢাবির হল খুলে দেয়ার দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের অবস্থান   © ফাইল ফটো

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর পরীক্ষার তারিখ ও রুটিন প্রকাশ করতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে করোনাভাইরাসে পরিস্থিতির কারণে হল খুলে পরীক্ষা নিতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারী নির্দেশনা মেনে হল খুলে পরীক্ষা নিতে হবে।

হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানাচ্ছে। কিন্তু হল বন্ধ রেখে যে পরীক্ষা পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মানে না। কারণ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়া থাকার কোন নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা নেই।

তারা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীদের থাকার একমাত্র জায়গা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। পরীক্ষার্থী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলগুলো খুলে দেয়ার দাবি তাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রায় সব কটি বিশ্ববিদ্যালয়েই বন্ধ থাকছে হল।

এর আগে গত ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ইউজিসির সঙ্গে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই হল খোলার দাবি জোরালো হচ্ছে। ঢাবিতে হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

এছাড়া একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। গত বুধবার দুপুরে থেকে এ কর্মসূচি করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

আগামী ৪ জানুয়ারি শীতকালীন ছুটি শেষে পর্যায়ক্রমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্সসহ বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হবে। তবে আবাসিক ও পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে পরীক্ষায় অংশ নিতে নারাজ ইবি শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে তারা।

পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১৫ দিন আগে মেয়েদের আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিভিন্ন আবাসিক ছাত্রীরা।

তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে মেয়েরা। ছেলেরা কোনোরকম আবাসন ব্যবস্থা করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে ধারণা করা হলেও মেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে আবাসন ব্যবস্থা একটি বিরাট প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার নেয়ার বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শর্ট নোটিশের মধ্যে আবাসিক হল বন্ধ রেখে এমন আয়োজন হিতে বিপরীতে হবে।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে হল না খুলেই পরীক্ষার নেয়ার পক্ষে অনড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি না। কিন্তু বিষয়টি হলো এটি কোনও সাধারণ বন্ধ নয়। আজ যদি কেউ হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বড় আকারের ঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

তবে শিক্ষার্থীদের দাবির পরেও হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে ভিন্ন কারণ খুঁজে পেয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির এক সদস্য বলেন, গত ১৩ ডিসেম্বর মিটিংয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হল না খোলার কথা জানান।

তিনি বলেন, কারণ হিসেবে তারা জানান, হলের দায়িত্বে থাকা হল প্রভোস্টসহ অন্যান্য শিক্ষকরা করোনার কারণে আবাসিক হলে থাকতে পারবেন না। ফলে হলের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাই হল বন্ধ রেখেই পরীক্ষা আয়োজন করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেয়ার প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ইউজিসি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেটা ইউজিসির। এ ব্যাপারে আমার মন্তব্য নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। তবে বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভাগ তাদের সুবিধা অনুযায়ী সব পরীক্ষা নেবে।


সর্বশেষ সংবাদ