২০ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪৪

অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

লোগো

অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের বিভিন্ন বর্ষের অনার্স/মাস্টার্স/ডিগ্রি/প্রিলির পরীক্ষা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়রের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, পরীক্ষা নেয়া না নেয়ার সিদ্ধান্ত ঢাবির। আপাতত অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে  রাখা হচ্ছে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন বলেন, পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন ছিল। বহুনির্বাচনী হলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না থাকায় অনলাইনের এ পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে অংশ নিতে পারবে না। এছাড়া পর্যাপ্ত ইন্টারনেট এবং মোবাইল সেবার বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরাও এর মাধ্যমে বঞ্চিত হতে পারেন।

অনলাইনে পরীক্ষা নয়, এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যম শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী দুর্জয় ধ্রুব বলেন, এখন যদি প্রতি কোর্স থেকে ৫টা অ্যাসাইনমেন্টের কথা বলা হয়ে থাকে তাহলে অনলাইনে পরীক্ষা বাদ দিয়ে এরজন্য আরও অতিরিক্ত ৫টা অ্যাসাইনমেন্ট যোগ করতে পারে। এর আগেও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে আমরা দেখেছি।

সরকারি বাঙলা কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ডিগ্রির শিক্ষার্থী মুন্নি দেব বলেন, আমাদের মত অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন থেকে শহর ছেড়ে গ্রামে অবস্থান করছে। ইন্টারনেট সমস্যার কারণে আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনলাইন ক্লাসেও ঠিক মত অংশ নিতে পারছি না। সেখানে যদি পরীক্ষা নেয়া হয় সেটা আমাদের মত শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। এখানে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করলে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার সুুযোগ থাকবে না।

সাত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের বিভিন্ন বর্ষের অনার্স/মাস্টার্স/ডিগ্রি/প্রিলির একটি ইনকোর্স ও টেস্ট পরীক্ষা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনলাইনে ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে কলেজসমূহ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী শেষ করার ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া একটি এসাইনমেন্টও নেয়া হবে।

তবে এখনো অধিভুক্ত এসব কলেজগুলোতে অ্যাসাইনমেন্টের নোটিশ দিলেও পরীক্ষার বিষয়ে তেমন কিছু জানানো হয়নি। অনেকে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ঢাবির পক্ষ থেকে অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষা এবং অ্যাসাইনমেন্টের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে কোন ধরনের পরীক্ষা নেয়া ঠিক হবে না। তাদেরকে শুধুমাত্র অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে।

সরকারি তিতুমীর কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হাসান রিপন বলেন, ঢাবির পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং অ্যাসাইনমেন্টের নোটিশ দেয়ার পর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের কাছে আপত্তি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসাবে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। এদিকে শুরুতে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অফিসিয়ালি কোন কিছু জানানো হয়নি। যে জায়গা থেকে গঠনমূলক আলোচনা একটি সুযোগ ছিল। পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমাদের পরামর্শ তুলে ধরেছি।

পরীক্ষা এবং অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও চাকরির বাজারে দ্রুত প্রবেশে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সম্মতি দিয়েছেন। প্রতিটি কলেজ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেবেন। এছাড়া পরীক্ষার বিষয়ে শিগগিরই অফিসিয়ালি বিস্তারিত জানানো হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে আমাদের সকল চেষ্টা-সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষে। তাদের এটা আগে বুঝতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ছেলেরা এ জায়গায় বসে থাকতে পারে না। ঢাবির পক্ষ থেকে এখন পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্টের যে সিদ্ধান্ত এটা একটা পদ্ধতি; এটা ব্রেক করা যাবে না। পরীক্ষা নেয়া না নেয়ার এখতিয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, আমাদের না।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।