ঢাবির পরীক্ষা আরও একমাস পর নেয়ার প্রস্তাব ছাত্র ফেডারেশনের

ছাত্র ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো
ছাত্র ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো  © ফাইল ফটো

হল খোলা ও স্নাতক শেষ বর্ষ-স্নাতকোত্তর পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর ৯টি প্রস্তাবনা সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন। বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে সংগঠনটির পক্ষ থেকে হল খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক আহমেদ জালাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১০ ডিসেম্বর পরীক্ষার বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে নেয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত জানার জন্য ছাত্র ফেডারেশন গুগল ফর্মের মাধ্যমে একটি অনলাইন জরিপের আয়োজন করে। ‘পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত’ শিরোনামের জরিপটি ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়। এতে এক হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ করে।

এর মধ্যে ‘আপনি কি হল না খুলে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে একমত?’ এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৩০ (৮৯.৭%) জন না ভোট ও ১০৬ (১০.২%) জন হ্যা ভোট দিয়েছে। ‘আপনি কি অনলাইনে ছাত্রদের মিড/ইনকোর্স/টিউটোরিয়াল নেয়ার ব্যাপারে একমত?’ এ প্রশ্নের উত্তরে ২৯২ (২৮.২%) জন ছাত্র হ্যা ভোট ও ৭৪৫ (৭১.৮%) জন না ভোট দিয়েছে।

‘আপনি কি চান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নিক?’ এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যা ভোট দিয়েছে ৬৮২(৬৫.৮%) জন ও না ভোট দিয়েছে ৩৫৪ (৩৪.২%) জন। শিক্ষার্থীদের লিখিত মতামত বক্সে ৬৬৭ জন তাদের নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

সে আলোকে ছাত্র ফেডারেশনের প্রস্তাব হলো-
১) অনার্স ও মাস্টার্সের পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ফাইনাল নেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অন্ততপক্ষে এক মাস সময় দিতে হবে।

২) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার আগে প্রতিটা কোর্সের রিভিউ ক্লাস নেয়া হবে। পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের সুবিধা বিবেচনায় অন্তত ১০ দিন রিভিউ ক্লাসের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। এছাড়া অনলাইনের সকল কোর্সের ম্যাটেরিয়ালগুলো ছাত্রদের সরবরাহ করতে হবে।

৩) রিভিউ ক্লাস এবং পরীক্ষা গ্রহণকালীন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৪) একদিনে দুটি পরীক্ষা নেয়া ভয়াবহ অমানবিক ও ক্লান্তিকর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলে ধ্বস নামা অনিবার্য। তাই তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শিক্ষার্থীদের প্রতি বিবেচনা দেখিয়ে দিনে সর্বোচ্চ একটি কোর্সের পরীক্ষা নিতে হবে।

৫) যেসকল ডিপার্টমেন্টের ল্যাব বাকি আছে তাদের ল্যাব ক্লাসের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।

৬) বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্তরের ছাত্রদের নেট পরিস্থিতি বিবেচনায় মিডটার্ম পরীক্ষা ক্যামেরা অন করে ভাইভার মাধ্যমে নেয়া জটিল ও অমানবিক একটি প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতিতে আর্থিক ও নেট সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীরা অবশ্যই বৈষম্যর শিকার হবে। সেক্ষেত্রে সেশনজট নিরসনে মিড/ইনকোর্স/টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে মিডের ৫০ শতাংশ নম্বর টেকহোম পদ্ধতিতে নিতে হবে। বাকি ৫০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর সরাসরি নিতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস আরো ইনটারেক্টিভ করা সম্ভব হবে।

৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক, ডিভাইস সমস্যায় থাকা শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল ডিভাইস কেনার জন্য বিশেষ লোনের ব্যবস্থা করতে হবে। সকল শিক্ষার্থীদের নেট প্যাকেজ কেনার জন্য ন্যূনতম মাসিক ফি দিতে হবে।

৮) যেহেতু অগ্রাধিকারভিত্তিতে অনার্স ফাইনাল ইয়ার ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিতে হবে। যে ইয়ারের পরীক্ষা হবে কেবল সেই ইয়ারের শিক্ষার্থীরাই হলে উঠতে পারবে। ফলে সহজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হবে। হল খোলা ছাড়া ফাইনাল পরীক্ষার সিদ্ধান্ত ভয়াবহ অমানবিক ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত। তাই, পরীক্ষা গ্রহণ প্রক্রিয়া সুস্থ ও গণতান্ত্রিক করার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল অবশ্যই খুলে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে- হলের প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের জামায় ডিসইনফেকটেন্ট স্প্রে করতে হবে ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ব্যতীত হলে ঢোকা ও হল থেকে বের হওয়া যাবে না। ক্যান্টিন থেকে বাটিতে করে খাবার নিয়ে রুমে গিয়ে খাওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। রুমগুলোতে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ডিসইনফেক্টটেন্ট স্প্রে করতে হবে।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে একটি আইসোলেশন সেন্টার তেরি করতে হবে। এভাবে আরো অনেক ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে হলে করোনা ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করে ছাত্র ফেডারেশন। প্রশাসন দায়িত্ব নিলে শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বহুগুণে কমে যাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

৯) পরীক্ষাকালীন সময়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বাসের ট্রিপ দ্বিগুণ করতে হবে। ফলে বাসগুলোতে অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রীর চাপ পড়বে না।

এ প্রস্তাবনা স্মারকলিপি হিসেবে জমা দেয়ার সময় উপস্থিতি ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান, সাধারণ সম্পাদক সালমান ফরায়জি ও শাখার সদস্য খন্দকার আফসিন আজাদ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণতান্ত্রিক ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান জানান।


সর্বশেষ সংবাদ