৪৩তম বিসিএস দিতে পারছেন না ঢাবির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী
করোনাভাইরাসের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সেশনের অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক পর্যায়ের সর্বশেষ পরীক্ষা দিতে পারেননি। অনেকের পরীক্ষা আটকে আছে। আবার যারা পরীক্ষা দিতে পেরেছেন তাদের অনেকের ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় কর্মজীবনেও প্রবেশ করতে পারছেন না। এরইমধ্যে ৪৩তম সাধারণ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় এতে আবেদনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা।
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ ও উপাদানকল্প কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীও একই কারণে ৪৩তম বিসিএসে আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় এসব শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যায়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতায় তারা স্নাতক সম্পন্ন করতে পারছেন না। একই অভিযোগ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র সংঠন স্বতন্ত্র জোটসহ একাধিক ছাত্র সংগঠন।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। এছাড়া ৪৩তম বিসিএসে আবেদনের সময় বর্ধিত করার দাবিতে আজ বেলা ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও সমাবেশ করবেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সামি বলেন, ‘পরীক্ষা না হওয়ার কারণে আমাদের পক্ষে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ আমাদের সমমনা অন্য এক সেশন তথা ২০১৫-১৬ সেশনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা সেই সুযোগটা আমরা পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আগের বর্ষগুলোর শিক্ষার্থীরা মেকআপ ক্লাসের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগটা নেই। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে পিএসসিকে এ কথা জানিয়ে দিতে চাই যে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে সার্কুলারের সময়সীমা বৃদ্ধি করে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষায় আমাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হোক।’
আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অনলাইন ক্লাস চলছে। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ার কারণে আমরা ৪৩তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করতে পারবো না, যা আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। পরিবার আমাদের দিকে চেয়ে আছে। এ মুহূর্তে আমাদের সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি কামনা করছি।’
এদিকে বিসিএস পরীক্ষা দিতে না পারার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় আন্দোলনে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও। সেশনজট নিরসন, বিশেষ পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে বুধবার (৯ ডিসেম্বর) মানববন্ধন করেন তারা।
তাদের দাবিগুলো হলো-, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ২.০০/২.২৫/২.৫০ পয়েন্টে পরবর্তী বর্ষে প্রমোটেড নিয়ম বাতিল করতে হবে এবং সর্বনিম্ন তিন বিষয় পর্যন্ত অকৃতকার্য দের প্রমোটেড দিতে হবে; অনার্স ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের ইম্প্রুভ পরীক্ষা আগামী ১ মাসের মধ্যে নিতে হবে এবং তৃতীয় বর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষা অতি দ্রুত নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে; ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা অতিদ্রুত নিয়ে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে; সকল বর্ষের ফলাফল সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। একটি সেশনে একের অধিক বর্ষের শিক্ষার্থী রাখা যাবে না; ডিগ্রি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের চলমান বিশেষ পরীক্ষা অতি দ্রুত নিয়ে এক মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত করতে হবে এবং সকল ইম্প্রুভ পরীক্ষা অতি দ্রুত নিতে হবে এবং ডিগ্রি অনার্স, মাস্টার্স-সহ সকল বর্ষের ফলাফল গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণসহ খাতা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর অধিভুক্ত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীর বিসিএস পরীক্ষা না দিতে পারার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় আবেদনের সময় বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সম্প্রতি তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছেন, ‘করোনার কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যারা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা দেবেন তাদের ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশি। আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাবো, আমাদের কোনো শিক্ষার্থী যেন চাকরি কিংবা বিসিএসের আবেদন থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।’ ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের সময় মার্চ-এপ্রিলের দিকে করার আহবান জানান তিনি।