ঢাবির শর্ত ভঙ্গ করে সূর্যসেন হলে ইমাম নিয়োগের চেষ্টার অভিযোগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শর্ত ভঙ্গ করে মাস্টারদা সূর্যসেন হল মসজিদের ইমাম নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগামীকাল বুধবার (৯ ডিসেম্বর) এই পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে। নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ ছাড়াও যে ভাইভা বোর্ড বসানো হয়েছে সে বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট।
হলসূত্রে জানা গেছে, মাস্টারদা সূর্যসেন হল মসজিদে খণ্ডকালীন ইমাম ছিলেন রইচ উদ্দিন। নানান অভিযোগ তুলে গত বছরের অক্টোবরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে হলে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। পরে হলের শিক্ষার্থীরাই মসজিদে ইমামতি চালিয়ে নেন।
তার এই শূন্য পদ পূরণের জন্য গত মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাকরির খবর পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রইচ উদ্দিনকে ইমাম পদে নিয়োগ দিতে তার অনুকূলে যায় এমন শর্তাবলী দিয়ে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি সিন্ডিকেটের কার্যবিবরণী অংশে ইমাম নিয়োগের যোগ্যতা নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আবাসিক এলাকার মসজিদসমূহে ইমাম বা খতিব নিয়োগের যোগ্যতা নিম্নোক্তভাবে নির্ধারণ করা হইল: প্রার্থীকে অবশ্যই কামিল/কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ/আরবি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রিধারী ও হাফেজে কুরআন হতে হবে’।
কিন্তু গত মার্চে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে কৌশলে সিন্ডিকেটে নির্ধারিত শর্তগুলো শিথিল করে দেয়া হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রার্থীকে অবশ্যই কামিল/ইসলামিক স্টাডিজ/আরবি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রিধারী হইতে হইবে। শুদ্ধ উচ্চারণ, সুন্দর কণ্ঠস্বর ও তেলাওয়াতসহ কুরআনে হাফেজ/উচ্চতর ডিগ্রি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নামাজ পড়ানোর বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়া যাইতে পারে। শিক্ষা জীবনে কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি বা সমমানের জিপিএ/সিজিপিএ গ্রহণযোগ্য নয়। প্রার্থীকে অবশ্যই ৩০ বৎসর বয়সের হইতে হইবে। অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে বয়সের শর্ত শিথিলযোগ্য।’
হল সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অবাঞ্ছিত ঘোষিত রইচ উদ্দিনের বয়স ৩০ বৎসরের উর্ধ্বে। তিনি কুরআনে হাফেজ নন। তার কণ্ঠ ও তেলওয়াতও সুন্দর নয়।
রইচ উদ্দিনকে নিয়োগ দিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন ‘আয়োজন’ দেখে বিরোধিতায় নেমেছেন হলের সাধারণ শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষার্থী বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সকল নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ায় নিজ ক্ষমতাবলে তার এলাকার প্রার্থী রইচকে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ বলেন, এখানে অনেক প্রার্থী আবেদন করেছেন। সিলেকশন বোর্ডে উপস্থিত বিচারকরা যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবেন।
সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু জানি না। এমনকি আমাকে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠিও পাঠানো হয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ শুনেছি। তা সত্য হলে তিনি ইমাম হিসেবে নিয়োগ পাবেন না।