ইউজিসির ঋণ সুবিধা বঞ্চিত অধিভুক্ত সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
- মোঃ রাকিবুল হাসান তামিম, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫৯ AM , আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:২৯ PM
দেশে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষাকার্যক্রম গতিশীল রাখতে অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্ট ফোন কিনতে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। দেশের ৩৯ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থী এই ঋণ সহায়তার আওতায় আসবে। যারা প্রত্যেকেই ঋণ পাবে ৮ হাজার টাকা করে। এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বার্ষিক বরাদ্দের বিপরীতে অগ্রিম হিসেবে সংশ্লিষ্ট খাতে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ইউজিসির তথ্য মতে, ‘সফটলোন অনুমোদন কমিটির’ সুপারিশের আলোকে অনধিক ৮ হাজার টাকা শিক্ষার্থীকে ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা রয়েছে। ঋণপ্রাপ্ত এসব শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র আসল অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন ৪টি সমান কিস্তিতে বা এককালীন তারা এই ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এই ধারাবাহিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৫৫৬ শিক্ষার্থীও এই বিনা সুদে ঋণ সুবিধার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েও ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের প্রায় দুই লক্ষ শিক্ষার্থী।
সম্প্রতি সাত কলেজের সমন্বয়ক এবং কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খোন্দকার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এক জরুরি নির্দেশনা দেন। ওই নির্দেশনা তিনি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সিলেবাস শেষ করতে অনেকটা সফল বলে দাবি করেন।
এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে যাতে পরীক্ষা শুরু করা যায় তার জন্য পরীক্ষা কমিটি গঠন, প্রশ্ন প্রণয়ন, রুটিন তৈরি, ফরম পূরন সহ সবকিছুর প্রস্তুতিও বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে ভিন্ন। সাত কলেজে অধ্যায়নরত স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই বলছেন, অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয় ডিভাইস না থাকায় এবং ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক শিক্ষার্থীরাই অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল।
ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার মধ্যে পুরোটা সময়ই বাড়িতে অবস্থান করছি। আমাদের অনলাইন ক্লাস নিয়মিত চলছে। শুরুর দিকে লকডাউন কালীন সময়ে বড় ভাই বাড়িতে উপস্থিত থাকায় তার ফোন দিয়ে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হলেও এখন বড় ভাই আবার কর্মস্থলে চলে যাওয়ায় স্মার্টফোন বা উপযুক্ত ডিভাইস না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারছিনা। চেষ্টা করছি ধারদেনা করে হলেও একটা ফোন কেনার।’
আবার অনেক শিক্ষার্থী ইন্টারনেটের উচ্চমূল্যের কারণে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোন ধরনের পদক্ষেপ না নেয়ার দরুন স্মার্ট ফোন থাকার পরও অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে অনলাইন ক্লসে অংশ নিয়ে উপকৃত হতে পারবেন তারা।
এ ধরনের সুবিধা থেকে কেন বঞ্চিত হলো সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কেউই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থেকেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশি দরিদ্র। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সন্তানের সংখ্যাই বেশি আমাদের কলেজগুলোতে। এছাড়াও আমরা সব শিক্ষার্থীদের হলে আবাসন সুবিধা দিতে পারিনা, তারা মেসে থেকে পড়ালেখা করে। ঢাবি শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পেলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও পাবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।’
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আশ্বাস দিয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘ইউজিসির সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা চুক্তি আছে। যার ফলে ঐ চুক্তির আলোকেই তাঁরা এটা করতে পারছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের কিভাবে এই সুবিধার আওতায় আনা যায় বিষয়টি নিয়ে আগামী মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকের সাথে আলোচনা করবো।’
বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় বিবেচনায় নেয়নি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) কাজ করছে। উনারা কি করেছে আমি জানিনা। আমি এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত না। আমার বলাতে কিছুই হবে না। তাছাড়া এখতিয়ারের বাইরে আমি কথা বলি না।’
তবে সাত কলেজের বিষয় উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) দেখেন না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য শিক্ষার আওতাধীন না। তাই এই বিষয়ে আমার ধারনা নেই ৷’
এসব বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।