জিপিএ ৪-এ ৪.০৩ পেল ঢাবি শিক্ষার্থী

  © টিডিসি ফটো

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ফলাফলে সর্বোচ্চ গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ (জিপিএ) ৪.০০ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফার্মেসি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর এসেছে জিপিএ-৪.০৩। যা রীতিমত হাস্যকর! এ ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। পরে সব শিক্ষার্থীর (প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা) ফল স্থগিত করে এক সপ্তাহ পর ‘সংশোধিত ফল’ প্রকাশ করেছে পরীক্ষা কমিটি। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে বির্তক।

সংশোধিত ফলে ওই বর্ষের ৬৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ জনের ফল পরিবর্তন এসেছে। তবে সবারই জিপিএ কমেছে। আর যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৪.০৩ যে পেয়েছিল, সংশোধিত ফলে তার এসেছে জিপিএ-৩.৮৮।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পরীক্ষার ১০ মাসেরও বেশি সময় পর এরকম বির্তকিত ফল প্রকাশের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া বর্তমান পরীক্ষা কমিটির অধীনে নির্ভুল রেজাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই প্রয়োজনে বিভাগের সকল শিক্ষকের স্বাক্ষরিত নম্বরপত্র যাচাই করে নতুন ট্যাবুলেশন সিট তৈরি করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা যেতে পারে।

জানা যায়, ফার্মেসি বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয় চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি। করোনার কারণে দীর্ঘ ১০ মাস পর পরীক্ষা পর ফলাফল প্রকাশ হয় গত ২৬ নভেম্বর। ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা কমিটির সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার পর এ ফলাফল প্রকাশিত হয়। তবে সে ফল ছিল ভুলে ভরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি প্রতিষ্ঠানে এটি মেনে নেয়া মত নয়! পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফ।

জানা গেছে, ফল প্রকাশের পর এক শিক্ষার্থীর সিজিপিএ-৪.০৩ আসলে তা নিয়ে শুরু হয় বির্তক। এতে বাকী শিক্ষার্থীরা সন্দেহ প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, সেই ফল স্থগিত করে আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) আবার সংশোধিত ফলাফল প্রকাশিত হয়। তবে যেখানে ১২ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর সিজিপিএ কমে যায় ০.০৫ করে অর্থাৎ যার আগে ছিল সিজিপিএ-৩.৮২ এখন সিজিপিএ-৩.৭৭। আরেকজনের সিজিপিএ ৩.৯৯ এসেছিল পরে সংশোধিত ফলে সিজিপিএ-৩.৯৪ এসেছে।

কারণ হিসেবে পরীক্ষা কমিটি জানায়, ফলাফল চেক করে সংশোধন করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, যে ফলাফল একবার প্রকাশিত হয় সেটি আবার কিভাবে চেক করে পরিবর্তন করে? আর আবার চেক করলে আবার ভুল বের হবে? তখন আরও কিছু শিক্ষার্থীর ফল কমে যাবে। তাই সংশোধিত ফলেও আস্থা হারায়তারা। তাছাড়া প্রতি বছর ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ফেল করলেও এবার কোন শিক্ষার্থী ফেল করেনি বলে অভিযোগ করেন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, সমস্যাটি মূলত PHR-101 কোর্সে। এই কোর্সে ৬-৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৪.০০ এ মধ্যে ৪.০০ পেয়েছিল। পরীক্ষা কমিটির ভাষ্য, এটা সংশোধন করতে গিয়ে তাদের ট্যাবুলেশন সিট পুনরায় চেক করে মোট ১২ জনের জিপিয়ে কমেছে ০.০৫ থেকে ০.০১০ পর্যন্ত। তাছাড়া PHR-105/106/107 কোর্সে অনেকের A+ ও A থেকে কমে A- ও B+ হয়েছে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নম্বরপত্র ও ট্যাবুলেশন শীটের নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

শিক্ষার্থীদের মতে, ফলাফল চেক করলে যদি নির্ভুল রেজাল্ট পাওয়া যায় তবে এটা কেবল কমে কেন, বাড়ে না কেন? রেজাল্টের নির্ভুলতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করার দাবি জানিয়েছে তারা। যা বর্তমান পরীক্ষা কমিটির অধীনে সম্ভব নয় বলে অভিযোগ তাদের।

এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমরা সব সময় হার্ডকপিতে ফলাফল প্রকাশ করি। কিন্তু এবার কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা অনলাইনে ফলাফল প্রকাশ করি। সেখানে এক্সেল শিটে ক্যালকুলেশন করার সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে ভুল হয়েছে।

পরবর্তীতে আমাদের কাছে অভিযোগ আসার সাথে সাথে আমরা ফলাফল ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করি। এবং আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) ফলাফল প্রকাশ হয়। যা নির্ভুল বলে দাবি করেন তিনি।

তারপরও শিক্ষার্থীদের কোন অভিযোগ থাকলে তা জানানো হয়ে গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ। 

এ বিষয়ে ফার্মেসি অনুষদের পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি মুঠোফোনে কারো সাথে ইনফরমেশন শেয়ার করি না।

‘ইফ ইউ নিড এনি ইনফরমেশন, ইউ উইল কাম টু মাই অফিস’— বলে অধ্যাপক ড. আবু সারা শামসুর রউফ ফোন কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ