রাবি শিক্ষকের গবেষণা

বাওড়ে ফিরছে ৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশী মাছ

৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশী মাছ
৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশী মাছ  © টিডিসি ফটো

দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। কিন্তু এই শঙ্কার মধ্যে সুখবর দিচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। বলছেন ৮ টি দেশী প্রজাতির মাছ বাওড়ে মজুদ করা গেছে। বাওড়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে চলমান একটি প্রকল্পের প্রথম সফলতা হিসেবে দেখছেন তারা। এভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো ফেরানো গেলে বাওড় নির্ভর ৮৪ হাজার মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন হবে এ প্রত্যাশা তাদের।

বিলুপ্তির পথে থাকা দেশীয় মাছের প্রাচুর্য্যতা ফিরিয়ে আনাসহ বাওড়ের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাওড় সংলগ্ন জনগোষ্ঠীর উপার্জন ও পুষ্টিচাহিদা পূরণে গবেষণা চলা এই প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়ামিন হোসেন।

তিনি জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরে দেশী মাছ ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই প্রকল্পের শুরু হয়। ঝিনাইদহের সার্জাত ও সাগান্না এই দুটি বাওড়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এক বছর শেষ না হতেই ৮ টি মাছ বাওড়ে ফেরাতে সক্ষম হয়েছি। যার মধ্যে কই, শিং, দেশী মাগুর, পাবদা, গুলশা টেংরা, ছোট টেংরা, বাজারী টেংরা এবং টাকি পার্শ্ববর্তী বিল এবং নদী হতে সংগ্রহ করে বাওড়ে মজুদ করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত আগস্টে পাবদা, গুলশে টেংরা প্রজননের বিষয়টি জানতে পারেন গবেষকরা। এছাড়াও বাকি দেশী মাছগুলোও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন করছে বাওড় দুটিতে। ডিম দিচ্ছে এবং বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে।

এ গবেষণা প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫০ টি প্রজাতির দেশী মাছ আছে। ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও সেগুলো সচারচর নদী নালা, খাল বিল ও বাওড়গুলোতে পাওয়া যেতো। তবে বিদেশী কার্প প্রজাতির মাছগুলোর অত্যধিক চাষ, জলবায়ু পরিবর্তন ও কিছুটা মানবসৃষ্ট কারণে হুমকির মুখে পড়ছে দেশী মাছের অস্তিত্ব, ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কিছু ছোট দেশী মাছের প্রজাতি।

২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটির কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বাওড়ে দেশী মাছের প্রাচুর্যতা ফেরানো সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর সার্বিক সহযোগীতায় এই প্রজেক্টের কাজ ব্যাস্তবায়িত হচ্ছে (PIU-BARC NATP-2 PBRG-154)।

গবেষণার সহকারি প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ইয়ামিন বলেন, প্রজেক্ট শেষে শতভাগ সফলতা পাওয়া যাবে আশা করি। বাকি বাওড় গুলোতেও চাষের উদ্যোগ নেওয়া যাবে। আর বাওড়ের সুফলভোগীদের জন্য নীতিমালা থাকায় ফেরানো মাছগুলো বাওড়ে স্থায়ীত্ব পাবে। এতে দেশী মাছের জিনব্যাংক ও ব্রুড (মা মাছ) বাংকে রূপ নিবে বাওড়গুলো। এর ফলে দেশের কোথাও না পাওয়া গেলেও ওখানে পাওয়া যাবে এবং হ্যাচারিগুলোতে মা মাছ নিয়ে গিয়ে ডিম ফুটাতে পারবেন।

এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বাঁওড়গুলোতে বার্ষিক গড় মহস্য উৎপাদন ৭,৭২৯ মেট্রিক টন দেশী মাছ উৎপাদন ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

প্রকল্পটির প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহা জেসমিন বলেন, এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ। আমরা যে মা মাছগুলো বাওড়ে মজুদ করা হয়েছিল সেগুলো ডিম দিয়েছে এবং বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে আট প্রজাতির মাছগুলোর মধ্যে গুলশা টেংরা অপেক্ষাকৃত বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। আশাকরি এ সময়ের মধ্যে বাওড়ে মাছ চাষের এ প্রকল্পের পূর্ণ সফলতা পাবো।’

‘আমরা যে মাছগুলো বাওড়ে ছাড়ছি সেগুলো আহরণ করেও জেলেরা সুবিধা পাচ্ছে। মাছগুলোর দেখভাল ঐ অঞ্চলের জেলেরাই করছে এবং তারা মাছ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী এ প্রকল্পের গবেষণার সাথে জড়িত বলেও জানান তিনি। যারা নিয়মিত বাওড়গুলোর মাছের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে এবং দেশী মাছ নিয়ে গবেষনারা সুযোগ পাচ্ছে।

এদিকে বাওড়গুলোতে মাছের বৈচিত্র সূচক নির্ধারণের মাধ্যমে প্রকল্পটিতে সহায়তা করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণাদল।


সর্বশেষ সংবাদ