ঢাবি ছাত্র-ছাত্রীদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেয় তারা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তৈরি ফেসবুক গ্রুপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তৈরি ফেসবুক গ্রুপ  © সংগৃহীত

অনলাইনের গুরুত্ব বাড়িয়েছে করোনা। সবকিছুতেই মানুষ যখন এই প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে, তখন বিয়ে কেন নয়? মূলত সেই চিন্তা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিয়ের ব্যবস্থাকে সহজ করতে গড়ে ওঠেছে ‘পাত্র-পাত্রী দু’জনেই হবে ঢাবিয়ান’ ফেসবুক গ্রুপ। উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ; যোগাযোগ নেই শিক্ষার্থীদের মধ্যেও। ফলে বিয়ের মত ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজও ব্যহত হচ্ছে। সে কারণেই তারা এই গ্রুপ তৈরি করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী শাহীদুজ্জামান খান নাঈম এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী মো. শহীদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন তরুণ এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছেন। গত পাঁচ মাসের মধ্যে এই গ্রুপের মাধ্যমেই ১৬টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, ফেসবুকের এই গ্রুপটিতে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন। বর্তমানে গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ১৮ হাজারের কিছু বেশি। এডমিন-মডারেটর প্যানেলে রয়েছে মোট ছয় জন।

মডারেটররা জানালেন, গ্রুপের নিয়ম হলো— প্রথমে পাত্র/পাত্রীর তথ্যাদি অ্যাডমিন-মডারেটর প্যানেলকে জানাতে হবে। যা প্যানেল সদস্যরা যাচাই করে একটি সিরিয়াল নাম্বার দেবেন। এরপর তা গ্রুপে পোস্ট করা হবে। এক্ষেত্রে পাত্র/পাত্রীর নাম এমনকি বিভাগও গোপন রাখার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া একজনের হয়ে অন্যজনও পোস্ট করতে পারবেন। এরপর উভয় পক্ষের ছন্দ অনুযায়ী সিভি আদান-প্রদানের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে বিয়ে সম্পন্ন হবে।

গ্রুপে পোস্ট করা মানিক (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থী জানালেন, উদ্যোগটি যে যেভাবেই দেখুক না কেন, এটা নিঃসন্দেহে অনেক ঢাবি শিক্ষার্থীর জন্য আশীর্বাদ। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে যোগ্য পাত্র/পাত্রী খুঁজে কঠিন হয়। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, তিনিও এই গ্রুপে বিয়ের প্রস্তাব রেখে পোস্ট করেছিলেন। সে সূ্রে ধরে বেশ কয়েকজন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যাদের মধ্য থেকে একজনকে পছন্দও হয়েছে। বাকিটা সময় বলে দেবে। 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যাডমিন শাহীদুজ্জামান খান নাঈম বলেন, বাংলাদেশের সমসাময়িক বাস্তবতায় বিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে। যেখানে হরহামেশাই মানুষ বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি সম পর্যায়ের পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে বিয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা এখন চ্যালেঞ্জ। এসব চিন্তা করেই ঢাবিয়ানদের জন্য কঠিন কাজকে সহজ করতে ‘‘পাত্র-পাত্রী দু'জনেই হবে ঢাবিয়ান’’ গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করেছি।

আরেক অ্যাডমিন মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বিয়ে অত্যবশ্যকীয় সামাজিক বন্ধন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটা জটিল হয়ে গেছে। অন্যদের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারাও বিবাহের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হয়। নিজের পছন্দ মত পাত্র/পাত্রী পান না অনেকেই। অথবা পেতে চাইলে অনেক পাত্র/পাত্রী দেখতে হবে। এটা জটিল, দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। তাই আমরা ঢাবিয়ানদের জন্য এমন একটা প্লাটফর্ম দাঁড় করাতে চেয়েছি; যার মাধ্যমে তুলনামূলক সহজে নিজের ক্যাম্পাসের পছন্দ মত পাত্র/পাত্রী পেতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আমরা বিয়ের মতো অত্যবশ্যকীয় সামাজিক বন্ধনকে যেমন সহজ করতে চাই। তেমনি বিয়ে নিয়ে জটিলতাকেও সহজ করতে চাই।

বিবাহের মতো একটি বিষয়ে মাধ্যম হিসেবে কাজ করে কোন অর্থ এডমিন-মডারেটর প্যানেল গ্রহণ করেন কিনা? জানতে চাইলে শহীদুল জানান, আমরা স্বেচ্ছায় এ কাজ করি। আমরা কোন অর্থ বা সুবিধা গ্রহণ করি না।


সর্বশেষ সংবাদ