জাবিতে স্বাস্থ্য বীমা না থাকায় ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা, মাথাব্যাথা নেই প্রশাসনের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বীমা থাকলেও ব্যবস্থা নেই শিক্ষার্থীদের। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা থাকলেও মাথাব্যাথা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য বীমা না থাকার ফলে, নিয়মিত চিকিৎসা সুবিধা পেতে অনেক শিক্ষার্থীকেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য বীমার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। যেকোন চিকিৎসার জন্য আমরা সেখানে যাই। কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়। এক্ষেত্রে রেফারকৃত হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য অনেকের থাকেনা। থাকলেও বিলের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা (চুক্তি) নেয়। এতে অনেককেই সুপারিশের জন্য দৌড়া-দৌড়ি করতে হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে বিব্রতকর একইসাথে পীড়াদায়ক।
করোনার মধ্যে নিজ চিকিৎসা নিয়ে ভোগান্তির শিকার দর্শন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, করোনার মধ্যে আমি অসুস্থ হলে হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমাকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়। কোন হাসপাতালেই করোনা আতঙ্কে আমাকে ভর্তি নিচ্ছিলোনা। পরে হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য-বীমার ব্যবস্থা থাকলে হয়তো খুব সহজেই ব্যাপারটির সমাধান হতো।
শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য বীমা সংক্রান্ত দায়িত্বে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি কম্পট্রোলার আশরাফুল আলম বলেন, আমরা বর্তমানে শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কিত সেবা প্রদান করে থাকি। আমাদের বীমা চুক্তি রয়েছে প্রগতি লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এর সাথে। এর আওতায় দেশের ২২টি বড় শহরে প্রায় ৯০টি হসপিটালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা যায়। করোনা মহামারির মধ্যে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিষয়টি চিন্তা করলেও আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে কোন কিছুই জানা নেই আমার। এটি প্রশাসনের ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যেগ নিলেই আমরা এর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি।
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এর পরিচালক অধ্যাপক আলমগীর কবীর বলেন, শিক্ষার্থীরা করোনার মধ্যে তাদের চিকিৎসা নিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়লে আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করি। এসময় আমাদের চিন্তায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষকই এ ব্যাপারে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেয়। আমরা (শিক্ষকরা) যেমন স্বাস্থ্য বীমার আওতায় নানা সুবিধা পায় এটি হলে শিক্ষার্থীদেরও অনেক ভোগান্তি লাঘব হবে। আশা করি প্রশাসন কাজটি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।
স্বাস্থ্য বীমা শিক্ষার্থীদের অধিকার উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে পূর্বে আলোচনা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন বাস্তবতায় তা মাথায় নেই প্রশাসনের। এর আগে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাথে আলোচনা হলেও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। আমাদের সদিচ্ছা থাকলেও এটি বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন যা প্রশাসনের একার পক্ষে ব্যয় করা অনেক কঠিন।
তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি-নির্ধারণী সভাসমূহে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।