০১ নভেম্বর ২০২০, ২১:০৯

ফেক আইডি দিয়ে প্রেম, পরিচয় জানার পর এ কেমন নগ্নতা ঢাবি ছাত্রের

মোফাজ্জল সাদাত  © ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি পরিচয় ছিল না। সশরীরেও দেখা হয়নি কোনদিন। যদিও দুজনের পরিচয় একটাই। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বর্তমান শিক্ষার্থী। নাম মোহাম্মদ মোফাজ্জল সাদাত ও রেহানা আক্তার (ছদ্মনাম)। 

মাস ছয়েক আগে করোনাকালের শুরুর দিকে ‘মাহমুদ হাসান’ নামের ফেসবুকের ফেক আইডির মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় সাদাতের। করোনাকালে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় প্রায় ফেসবুকে তাদের মধ্যে চ্যাটিং, ভিডিও ও অডিও কথাবার্তা চলতো। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিন যেতে না যেতেই ওই ছাত্রীর সরল বিশ্বাসের সুযোগ নেয় ফেক আইডি চালানো সাদাত। দেখাতে বলে শরীরের খোলামেলা ছবি। ওই ছাত্রীও ভালোবাসার টানে প্রস্তাবে রাজি হয়ে এসব আদান-প্রদান করে। পরে এসব আপত্তিকর ছবি সাদাত তার স্মার্টফোনে সংগ্রহ করে রেখে দিত। ওই ছাত্রী তখনও জানতো না তার সেই স্বপ্নের মানুষ আসলে ফেইক।

অবশেষে মাস তিনেক আগে ওই ছাত্রীর ভুল ভাঙে। বুঝতে পারে- ক্ষণিকের জন্য আপন করে নেয়া মানুষটি আসলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। এই বিষয়টি বুঝতে পারলে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রী সাদাতের সঙ্গে ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপরই সাদাতের আসল চেহারা প্রকাশ পায়! এরপর ওই ছাত্রীকে সাদাত হুমকি দেন, সর্ম্পক না রাখলেই আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হবে। তবুও এ হুমকিকে উপেক্ষা করে ওই ছাত্রী জোর করেই সাদাতের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

এদিকে, মাস তিনেক পর সত্যি সত্যিই ওই ছাত্রীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে সাদাত। গতকাল শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে ‘মাহমুদ হাসান’ নামের ওই ফেক আইডিতে ওই ছাত্রীর বেশকিছু নগ্ন ছবি আপলোড করে সাদাত। একইসঙ্গে ওই ছাত্রীর পরিচিত বন্ধুদের এসব পাঠানো হয়।

এদিন রাতেই ওই ছাত্রীর এক বান্ধবী আইনী সহায়তা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চে (ফেসবুককেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের গ্রুপ) স্ট্যাটাস দেন। পরে বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের নজরে আসলে ওই ছাত্রীকে তারা সব ধরনের আইনী সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। তাদের সহায়তায় আজ রবিবার শাহবাগ থানায় ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন ওই ছাত্রী। এরপর পরই ঢাবি এলাকা থেকে ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

জানা যায়, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুসল্লী ইউনিয়নে। তিনি স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

এদিকে, গত বৃহম্পতিবার (২৯ অক্টোবর) মোহাম্মদ মোফাজ্জল সাদাত নামে ওই ছাত্রের মূল ফেসবুক আইডি থেকেে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মোবাইলটা কিছুক্ষণ আগে বাসে উঠার সময় ছিনতাই হয়েছে। কারো কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ বা কল দিয়ে কিছু চাইলে/বললে বিভ্রান্ত হবেন না প্লিজ।’

এদিকে, আজ তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই তাই এই স্ট্যাটাস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ফোন চুরি হওয়ার পর অন্যকেউ এসব ছবি প্রকাশ করেছেন। তবে ভুক্তভোগী ছাত্রীর এক সহপাঠী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের এক সদস্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সাদাতই এসব ছবি প্রকাশ করেছেন। তাছাড়াও ওই ছাত্রীর করা মামলার এজহারেও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।

মামলার এজহারে ওই ছাত্রী জানান, করোনার প্রার্দুভাবের শুরুর দিকে মোহাম্মদ মোফাজ্জল সাদাত নামে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ওই ছাত্রের সঙ্গে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। এসময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে তাদের মধ্যে চ্যাটিং, ভিডিও ও অডিও কথাবার্তা চলতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠলে ওই ছাত্রীর সরলতার সুযোগ নিয়ে ইমোশনাল কথাবার্তা বলে সাদাত নগ্ন ছবি দেখাতে বলত। ওই ছাত্রী সরল বিশ্বাসে তার এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে এসব প্রদান করে। পরে এসব আপত্তিকর ছবি সাদাত তার ফোনে সংগ্রহ করে রেখে দেয়।

এজহারে ওই ছাত্রী আরও উল্লেখ করেন, শনিবার (৩১ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে আমার এক বন্ধুর আইডিতে মাহমুদ হাসান নামের ফেসবুক আইডি থেকে বেশকিছু নগ্ন ছবি প্রেরণ করে। ঢাবি ছাত্র সাদাত এসব ছবি প্রেরণ করেছে দাবি করে তিনি জানান, এ অবস্থায় আসামী সাদাত এসব ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে আমার মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করে। যাতে আমি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি।

এদিকে, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর এক বান্ধবী জানান,  সম্প্রতি তাদের সর্ম্পকের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে ওই ছাত্রীর আপত্তিকর ছবিগুলো ফেসবুকের ফেক আইডি দিয়ে আপলোড করে সাদাত। পরে বিষয়টি জানতে পারলে আইনী সহায়তা চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চে (ফেসবুক কেন্দ্রীক শিক্ষার্থীদের গ্রুপ) একটি স্ট্যাটাস দেয়।

আরাফাত চৌধুরী নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবক জানfন, মোফাজ্জল সাদাত ওই ছাত্রীর সাথে তার ফেক আইডি দিয়ে (Mahmud Hasan) এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। পরে বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে ওই ছাত্রীকে সব ধরনের আইনী সহায়তার আশ্বাস প্রদান করি।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ছাত্রী রেহানা আক্তার (ছদ্মনাম) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ফেক আইডি থেকে তার সঙ্গে রিলেশন গড়ে উঠে। মাস তিনেক আগে যখন জানতে পারি সে আসলেই ভুল পরিচয় দিয়েছে, তখন ব্রেকআপ করার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর তার সাথে সব ধরনের যোগযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এরমধ্যেই গতকাল এব ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করলে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ভাইদের সহযোগিতা নিয়ে থানায় মামলা করি। এ ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বলেন, ওই ছাত্রী বাদী হয়ে থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করলে পরে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য৷ পুলিশকে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।