আবাসিক হলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে এসে বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কবি সুফিয়া কামালের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হল প্রশাসন ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার বন্ধে হলে রাখা একাডেমিক কাগজপত্র সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হলেও তা গোছানোর সময় দিচ্ছেনা হল প্রশাসন। অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেও মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় দেয়া হচ্ছে বলে তারা জানায়। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রশাসন। এরপর হলের শিক্ষার্থীরা একধরনের অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের হলের কক্ষে রেখে যায় বই-খাতা, কাপড়, একাডেমিক কাগজপত্র সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এর আগে ১৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের কিছুদিনের মধ্যে কবি সুফিমা কামাল হলের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে আসলে শুধুমাত্র কাগজপত্র ও বইখাতা নিতে দেয়া হচ্ছে। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে চাইলে হল প্রশাসন নিতে দেয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে না দেওয়ায় এসব জিনিসপত্রে উইপোকা বাসা বেঁধেছে। কেটে ফেলেছে কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রও।
এসব খবর পেয়ে হলের শিক্ষার্থীরা তাদের জিনিসপত্র নিতে আসলে তাদের শুধুমাত্র শীতের কাপড় ও দুটি জামা ছাড়া অন্য কাপড় বা জিনিসপত্র নিতে দিচ্ছেনা হল প্রশাসন। উল্টো তাদের সাথে মিলছে অমানবিক আচরণ।
অভিযোগ রয়েছে, হলে শিক্ষার্থীদের রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিতে আসলে হাউজ টিউটর ও কর্মচারীরা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে রুমের জিনিসপত্র গোছানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে মাত্র পাঁচ মিনিট। এই পাঁচ মিনিটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সকল জিনিসপত্র ঠিক করে যা নেওয়ার তা নিয়ে বের হয়ে যেতে হয়। এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা।
হলের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করলে এসময় তাদের সাথে একজন কর্মচারী সঙ্গে থাকেন। এসময় সামান্য সময় দেরি হলে কর্মচারীদের কাছ থেকেও শুনতে হয় নানান কথা। এদিকে, সময় কম দেওয়ায় উইপোকায় নষ্ট করা কাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্রও পরিষ্কার করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। বিষয়ে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হলের শিক্ষার্থীরা।
শুধু তাই নয়, দূরদূরান্ত থেকে আসা এসব শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে ঠিকমতো ফ্রেশ হওয়ার সময় পর্যন্ত দেয়না হল প্রশাসন। কোন শিক্ষার্থী হলের গেস্টরুমে ফ্রেশ হতে চাইলে হলের হাউজ টিউটরদের নির্দেশে তাদের বের করে দেয় হলের কর্মচারীরা। এসময় হাউজ টিউটর ও কর্মচারীদের মুখে শুনতে হয় নানান কথা।
এ বিষয়ে হলের শিক্ষার্থী নুসরাত সাদিয়া বলেন, গত সাত মাস ধরে হল বন্ধ। এসময়ে আমার সকল জামা কেটে ফেলেছে। এ অবস্থায় হলে আসলে আমাকে মাত্র দুটি জামা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই দুটি জামাতেও কেটেছে অনেক। তাছাড়া আমার বই-খাতাও সব কেটে ফেলেছে। আমি এগুলো পরিষ্কারও করতে পারিনি। আমাকে এগুলো গুছানোর সময় দেয়নি। মাত্র পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় দিয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, সারারাত জার্নি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে হলে জিনিসপত্র আনতে গেলে এক ঘন্টা পর হলে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছি। তিনি বলেন, আমি জানতাম হল খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। আমি ১০টার দিকে হলে গেলে আমাকে গেস্টরুমে পর্যন্ত প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আমি জানতাম না যে হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় ১১টা থেকে। তখন আমাকে বাধ্য হয়ে ১ ঘন্টা হলের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ঐ সময় আমার সাথে অনেক মেয়েও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
তিনি আরও বলেন, রুমে প্রবেশ করে ৫ মিনিটও সময় দেয়া হয়নি আমাকে। ২ মিনিট পার হবার পর থেকে জলদি করেন জলদি করেন শুরু করেন সঙ্গে থাকা হলের এক কর্মচারী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের এক ছাত্রী বলেন, আমাদের অনেক জিনিসপত্র উইপোকা কেটে ফেলেছে। যারা ঢাকার বাইরে থেকে হলে আসছে তাদের মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য রুমে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র দুটি জামা এবং শীতের কাপড় নেওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। আমাদের সাথে একজন করে খালা পাঠাচ্ছে। উনারা সারাক্ষণ বলতেই থাকে আসেন, আসেন; সময় শেষ। জিনিসপত্র ঠিকমত গুছানো হবে এইটুকু টাইম দিচ্ছেন না তারা।
তিনি আরো বলেন, হলের নানান সমস্যা হাউস টিউটরদের। ফোন দিলেও আমরা তাদের সময়মতো পাইনা। ম্যাডামরা ঠিকমতো ফোন ধরে না, ধরলেও খারাপ ব্যবহার করে। অনেকের সাথে অনেক রাগারাগি পর্যন্ত করেছে। হলের গেটের দাদুরা পর্যন্ত আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রাধ্যক্ষা অধ্যাপক ড. শামিম বানুকে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, এমনি হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি জানতে হবে। আমি এখনই খবর নিচ্ছি।