২২ অক্টোবর ২০২০, ১০:১৩

রাবির ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সােবহানসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরমধ্যে পছন্দের প্রার্থীদের  শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে নীতিমালা উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তনের অভিযোগও রয়েছে। এর মাধ্যমে নিজের মেয়ে ও জামাতাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানিয়েছেন উপাচার্য, এমন প্রমাণ মিলেছে তদন্তে।

গত মঙ্গলবার রাবি উপাচার্য এম আবদুস সােবহানসহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযােগ ভদন্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিবেদন দিয়েছে ইউজিসি। তদন্ত কমিটির প্রধান ও ইউজিসির সদস্য দিল আফরােজা বেগম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বিষয়টি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এ বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গণমাধ্যমকে বলেন, এখনাে প্রতিবেদনটি হাতে আসেনি। পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গণশুনানিসহ নানা উপায়ে তদন্ত করেন ইউজিসির কমিটি। তবে রাবি উপাচার্য এম আবদুস সোবহান শুরুতে রাজি থাকলেও পরে গণশুনানিতে হাজির হননি। এমনকি ইউজিসি চেয়ারম্যানকে লেখা এক চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠনে ইউজিসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এখন প্রতিবেদন জমার পর তার বক্তব্য জানতে সাংবাদিকরা মোবাইলে যােগাযােগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, নীতিমালা পরিবর্তন করায় কম যােগ্যতায়ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন উপাচার্যের কন্যা ও জামাতা। এ রকমভাবে আরও অন্তত ৩৪ জন শিক্ষক হয়েছেন। অথচ আগের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের অবেদনের যােগ্যতাই ছিল না। এতে বাদ পড়েছেন যােগা প্রার্থীরা। ইউজিসির তদন্তে এটিসহ আারও অনেক অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এজন্য নীতিমালা পরিবর্তনের পর নিয়ােগ পাওয়া ৩৪ জনের নিয়ােগ বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

২০১৭ সালের মে থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুস সােবহান। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে নীতিমালা পরিবর্তন করেন তিনি। আগের নীতিমালায় আবেদন করতে যােগ্যতা ছিল সনাতন পদ্ধতিতে এসএসসি থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সব স্তরে প্রথম শ্রেণি। আর গ্রেড পদ্ধতিতে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.৫০। এছাড়া স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫০।

এ ছাড়া পরের দুই স্তরে বিভাগের মেধাত্রম প্রথম থেকে সপ্তমের মধ্যে খাকতে হবে। কিন্তু পরিবর্তিত নীতিমালায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ কমিয়ে ৩.২৫ করা হয়। এছাড়া মেধাক্রমে থাকার নিয়মও তুলে দেওয়া হয়। নীতিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশে চলা চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্যতা এখন সর্বনিম্ন।

তদন্ত কমিটির মতে, যোগ্যতা কমানাের উদ্দেশ্য ২০১৭ সালের আগে যাদের আবেদনে যোগ্যতা ছিল না, তাদের পথ উন্মুক্ত করা। এই সুযোগেই মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে উপাচার্যের কন্যা সানজানা সােবহান নিয়ােগ পান। আর জামাতা এ টি এম শাহেন পারভেজ নিয়োগ পান ব্যবসায় প্রশাসন ইনষ্টিটিউটে (আইবিএ)।

অথচ আগের নীতিমালায় তাঁদের আবেদনেরই যােগতা ছিল না। উপাচার্যের কন্যার বিভাগে মেধাক্রম ২১তম, আর জামাতার এমবিএ পরীক্ষায় মেধাক্রম ৬৭তম, সিজিপিএ ৩.৪৭। অথচ অন্য আবেদনকারীদের শিক্ষাগত যােগ্যতা ছিল বেশি। এর জবাবে উপাচার্য কমিটিকে জানিয়েছেন, নিয়ােগ বাের্ড নিয়ােগ দিয়েছে। কিন্তু তদন্ত কমিটি দেখেছে, বাের্ডে পাঠদানের দক্ষতা যাচাই হয়েছে, তা দালিলিক প্রমাণ নেই। ফলে নিয়ােগে বাের্ডেরও দোষ পাচ্ছে কমিটি।

এছাড়া আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়ােগেও তদন্ত কমিটি অনিয়ম পেয়েছে। পাশাপাশি উপাচার্যের বাসভবনে ওঠার পর আগে বরাদ্দ পাওয়া বাড়িটি কাগজে-কলমে ছেড়ে দিলেও আসবাব রাখার জন্য অন্তত দেড় বছর দখলে রাখেন। এমন অনিয়মের জন্য উপাচার্যকে দায়ী করে তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের মতাে মর্যাদাশীল পদে থেকে এমন কর্মকাণ্ড ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এজন্য উপাচার্যের বিষয়ে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।