আবাসিক হলে কর্মচারীদের মাদকের আসর
করোনা মহামারিতে সাত মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এই সুযোগে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কক্ষে মাদকের আসর বসিয়েছে কর্মচারীরা। গত সোমবার (২০ শে অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী হলের একটি কক্ষ থেকে ইয়াবাসহ দুই কর্মচারী আটক হলে এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে।
হল সূত্রে জানা যায়, হলের নিরাপত্তা রক্ষী দেলওয়ার হোসেনের সংশ্লিষ্টতায় ওই কক্ষে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব এ্যাটেন্ডডেন্ট আব্দুল খালেক, শেখ হাসিনা হলের অর্ডারলি পিওন জাহিদুল ইসলাম (পলাতক) এই দু’জনকে নিয়ে দুই মাস ধরে ইয়াবার আসর বসতো।
এব্যাপারে আল-বেরুনী হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যায় হলে এসে জানতে পারি বার্বুচিদের কক্ষে কারা যেন আছে। এর ভিত্তিতে আমি হলের সিকবয়কে নিয়ে ওই কক্ষে পৌঁছে দেখি দুজন বের হয়ে যাচ্ছে। আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলেন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। এই সময় তাদের উপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন আমরা হলের গার্ড দেলোয়ার হোসেনের এসেছি। পরে কক্ষটিতে তল্লাশি চালানো হলে ইয়াবা ও ইয়াবা খাওয়ার সরাঞ্জম পাওয়া যায়। এদিকে তল্লাশির সময় ওই দুজন পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এব্যাপারে দেলওয়ারের কাছে জবাব চাইলে সে বলে ওই কক্ষটির তালা পরিবর্তন করে সে গত দুইমাস ধরে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করে আসছিল ’
তিনি আরও বলেন, ‘গার্ড দেলওয়ারকে তালা পরিবর্তন ও বন্ধ হলে অন্য কর্মচারীদেরকে নিয়ে আসার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে কোন উপযুক্ত উত্তর দিতে পারেনি। তাই আমি আগামীকাল (বুধবার) হলের মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে, ওনারা আমাকে প্রয়োজনীয় আলামত ও লিখিতভাবে অভিযোগ জমা দিতে বলেছেন। বুধবার আমরা জমা দিয়ে দিব। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত নিয়মে ব্যবস্থা নিবে।’
এ বিষয়ে হলের নিরাপত্তা রক্ষী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে আমি হলে ছিলামনা। ওই কক্ষটির চাবি একটি দোকানে রেখে আমি ইসলামনগর বাজারে যাই। তখন খালেক ও জাহিদ আমাকে ফোন দিয়ে বলে তাদের কাজ আছে একটু চাবি দিতে। পরে তারা চাবি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে। এরপর নাকি প্রভোস্ট স্যার তল্লাশি করে ইয়াবা পাইছে। এই বিষয়ে আমি আর কিছু জানিনা।’ কক্ষটির তালা পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগের তালা নষ্ট হয়ে গেছে তাই এই তালা আমি পরিবর্তন করেছি।’
এদিকে পলাতক থাকা আব্দুল খালেক ও জাহিদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে এ ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বুঝতে পারছিনা হলের নিরাপত্তারক্ষীরাই যদি হল কক্ষে দুই মাস ধরে মাদকের আসর বসিয়ে রাখতে পারে। তাহলে মাদকাসক্ত রক্ষীদের তত্ত্ববধানে শিক্ষার্থীদের হলে রেখে আসা জিনিসপত্র ঠিকভাবে সংরক্ষিত আছে কি না? অথচ দুই মাস ধরে হল প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে এ কাজ হচ্ছে বলে জানলাম।’