সুদীপ্তের অপসারণসহ চার দাবিতে জাবিতে গণস্বাক্ষর

সুদীপ্ত শাহীন ও রিকশাচালক মো. নাহিদ
সুদীপ্ত শাহীন ও রিকশাচালক মো. নাহিদ   © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিনের হাতে একের পর এক ছাত্র, কর্মকর্তা, বহিরাগত ও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রিক্সাচালক, দোকানদার হিংস্রতার শিকার হচ্ছেন। গত শুক্রবার নতুন করে মারধরের শিকার হয়েছেন নাহিদ নামের একজন ভ্যান চালক।

এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ অংশীজনেরা। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সুদীপ্তের অপসারণসহ চার দাবিতে গণস্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২০শে অক্টোবর) রাত থেকে অনলাইনে গুগল ফর্ম পূরণের মাধ্যমে এ গণস্বাক্ষর অভিযান আরম্ভ হয়।

সুদীপ্তের অপসারণ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের দাবি সমূহের মধ্যে রয়েছে মারধরের শিকার ভ্যানচালক নাহিদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও বিচারের ব্যবস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে আগত সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

গণস্বাক্ষর পূর্বক এক বিবৃতিতে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন আবারো কৃতিত্বের সাথে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন। এবার তার বিরুদ্ধে নাহিদ হক নামে এক ভ্যান চালককে মারধর ও মাদকের মিথ্যা মামলা প্রদানের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক কুকর্ম করার পরেও কোনোরকম শাস্তির মুখোমুখি তাকে হতে হচ্ছে না! তার পেশাগত দায়িত্বের কোথাও তাকে মারধোর করার কোনো এখতিয়ার দেয়া হয় নি, পেশাদারিত্বের শাস্তিযোগ্য লঙ্ঘন করেই সে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে । তার এই ক্ষমতার পেছনের ব্যক্তি কারা? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অজানা নয় এসব প্রশ্নের উত্তর। এই অসৎ ও উশৃঙ্খল নিরাপত্তা কর্মকর্তার অপকর্মের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্মোহ নীরবতা আর একটি দিনের জন্যেও সহ্য করবোনা আমরা।”

বিবৃততে আরো বলা হয়, “শুক্রবারে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা মরিয়ম লিজা বটতলার দোকানদার ও ভ্যানচালক নাহিদ ভাইকে ফোন করে প্রান্তিকে যেতে বলেন। সেখান থেকে তার বৃদ্ধ বাবা ও বোনকে কোয়ার্টারে পৌঁছানোর জন্যই তিনি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে শাহিন তাকে চৌরঙ্গী মোড় থেকে আটক করেন। তাকে কনট্রোল রুমে ধরে নিয়ে গিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন এবং গায়ে মুখে কিল ঘুষি দিতে থাকেন। প্রায় চার ঘণ্টা তাকে ঐ রুমে আটকে রাখা হয়। মারধরের ঘটনা বাইরে বলবে না এই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়। মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুললে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় তাকে। এই ভয়ানক মারধোরের ফলে নাহিদের বাম পা ভেঙে গিয়েছে।”

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও তিনি ক্যাম্পাসের সাবেক শিক্ষার্থী, আকবর হোসেন (ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান, ২৫তম আবর্তন) এর সাথে দুর্ব্যবহার করেন, এক নারী সংবাদকর্মীকে উত্ত্যক্ত করা ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার আগে সুদীপ্ত শাহীন নিরাপত্তা শাখা কর্মকর্তাদের মাদকাসক্ত অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি পদপ্রার্থী শরীফ ও তার ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়ে দুটি মোবাইল ফোন ও ৩৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।

এছাড়া ১৯ ব্যাচ থেকে শুরু করে ৪৯ ব্যাচ পর্যন্ত বহু অভিযোগ করা হয়েছে সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন অন্তত ৪ জন শিক্ষক। তার অকথ্য ও উগ্রভাষা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করা, সহিংসতা তৈরি করা নতুন কিছু না। তবে নাহিদ ভাইয়ের উপর অমানবিক আক্রমণ যেন সকল উদাহরণ কে হার মানায়।”

এব্যাপারে গণস্বাক্ষর অভিযানের নেতৃত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস'কে বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত আট শতেরও অধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারীর স্বাক্ষর অনলাইনে সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। বিপুল সংখ্যক অংশীজনের এ স্বাক্ষর প্রমাণ করে সুদীপ্তের সকল ঘৃণ্য অপকর্মের। এ অপকর্মের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আগামীকাল (বুধবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হবে।”


সর্বশেষ সংবাদ