সেশনজট: ২২ মাস ধরে একই বর্ষে শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফাইল ফটো

পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে যথা সময়ে পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করতে পারছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট (আইইআর)। ফলে দীর্ঘদিন থেকেই সেশনজটের কবলে পড়তে হচ্ছে ইনস্টিটিটিউটের শিক্ষার্থীদের। প্রায় ২২ মাস ধরে একই শিক্ষাবর্ষে আছেন তারা। এর ফলে বিভিন্ন সঙ্কটের মুখোমুখী হতে হচ্ছে তাদের। চলমান করোনার মহামারী তাদের সে সঙ্কট আরো বাড়িয়েছে।

ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ২২ মাস ধরে আমরা একই বর্ষে ঝুলে আছি। পারিবারিক ও মানসিক ভাবে খুবই বিপর্যস্ত হয়ে গেছি। ডিরেক্টর স্যারও বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করছে। অনেক সহপাঠী এটাও বলছে যে চবির আইইআরে পড়ার চেয়ে আত্মহত্যাই শ্রেয়।

এদিকে, ইন্সটিটিউটটিতে পাঁচটি বর্ষের বিপরীতে বর্তমানে চলমান রয়েছে সাতটি ব্যাচ। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শুরু না হলেও ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে আরও ১০৫ জন শিক্ষার্থী। এদিকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে যথা সময়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার ফলাফল যথা সময়ে না হওয়ার কারণে। এভাবেই পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘসূত্রিতা চলছে ইন্সটিটিউটটিতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্সটিটিউটের এক বর্ষের শ্রেণী প্রতিনিধি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের ইন্সটিটিউটের সামগ্রিক কার্যক্রমে একটু অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হয়। শিক্ষক সংকট অনেক বড় একটা সমস্যা আমাদের জন্য। তারপরও ইন্সটিটিউটের ঊর্ধ্বতনরা যদি একটু গুরুত্বের সাথে ব্যাপারটা দেখে, তাহলে সমাধান করা সম্ভব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, শুরু থেকেই আমাদের ক্লাস এবং শিক্ষক সংকটের কারণে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনেক দেরিতে হয়। ফল প্রকাশেও দেরি করে আইইআর। পরে, রেজাল্ট দিলে দেখা যায় অনেকেই এক বা একাধিক কোর্সে অনুত্তীর্ণ রয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রথম বর্ষের রেজাল্ট এমন এক সময়ে দেওয়া হয় যখন পরবর্তী সেশনের (২০১৮-১৯) প্রথম বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষাও চলে এসেছে। আমরা যারা অনুত্তীর্ণ হয়েছি, তাদের সাথে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসের মিল নেই। এমতাবস্থায় আমরা যদি এক বছর ড্রপ দিয়ে ২০১৮-১৯ এর সাথে পরীক্ষা দেই তাহলে, সিলেবাস ভিন্ন হওয়ার কারণে আমরা এত কম সময়ে সব বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারব না।

তিনি বলেন, আমরা অনেকবার আবেদন করেছিলাম যাতে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ২০১৭-১৮ এর সিলেবাস অনুযায়ী স্পেশাল পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু সেটার কোন সিদ্ধান্ত আমাদের এখনও জানানো হয়নি। এমন অবস্থায় আমরা অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নিজেরাও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কী করবো। এদিকে আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের অনলাইন ক্লাসও প্রায় শেষ। এখন আমাদের স্পেশাল পরীক্ষা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

এব্যাপারে ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বেশ কিছু স্পেশাল পরীক্ষা হয়েছে, কিছু রেজাল্ট হয়েছে ও কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে। কেউ যদি পুরাতন সিলেবলভুক্ত হয় এবং স্পেশাল পরীক্ষার অনুমোদন হয় তাহলে তার সিলেবাস অনুযায়ীই তার পরীক্ষা হবে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটা আমরা কখনই চাই না।

তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়া বা নিয়মের বাইরে কোনো কিছুই করা হচ্ছে না। বিশেষ পরীক্ষাগুলো বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় এটা দিতে বাধ্য না। তবে, মানবিক কারণে অনেক সময় অনুমোদন দেয়।

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে। যদি কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয় তাহলে তখন দেখা যাবে। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বা বিশ্ববিদ্যালয় যদি পরীক্ষার অনুমতি দেয় আমরা পরীক্ষা নেব।

এদিকে, রবিবার (১৮ অক্টোবর) সেশনজট নিরসনের দাবিতে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনও জানিয়েছে ইন্সটিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান।


সর্বশেষ সংবাদ