জাবিতে ভারপ্রাপ্তদের কাধে প্রশাসন
দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত ক্যাম্পাসের একটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-৭৩ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ব-প্রশাসনের ওপর ন্যাস্ত। বর্তমানে সেই নির্বাহী ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে ১৫ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধানের ওপর। এমনকি প্রশাসনিক কার্যক্রমের ‘হৃৎপিণ্ড’ খ্যাত রেজিস্ট্রার কার্যালয়টি আড়াই বছর ধরে চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের বেশ কিছু ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, উপাচার্য প্রয়োজনে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ বাদে সব পদে অনধিক ছয় মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে পারেন। তবে ওই সব পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা ছয় মাসের মেয়াদ পার হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমান প্রক্টর এক বছর আট মাস, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আড়াই বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে নিজের অনুগত রাখতে উপাচার্য সচেতনভাবেই কাউকে পূর্ণ ক্ষমতা না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দপ্তরগুলো চালাচ্ছেন।
খোজঁ নিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান, কম্পট্রোলার মোসানুল কবীর, সমাজবিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ডিন ড. রাশেদা আখতার, প্রকৌশল অফিসের প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম মো. শরীফ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক নাসির উদ্দিন, জনসংযোগ অফিসের পরিচালক আবদুস সালাম মিঞা, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির পরিচালক মেসবাহউদ্দিন সরকার ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর এক অফিস আদেশে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিনের স্থলাভিষিক্ত করা হয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ভারপ্রাপ্ত ডিনের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতারকে। এখন তিনি একসঙ্গে দুটি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন। উপাচার্য নিজ ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ দেন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার, শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক এবং আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল, আল বেরুনী হল, মওলানা ভাসানী হল পরিচালিত হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ দিয়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের পছন্দের ব্যক্তিরাই অস্থায়ী পদগুলোতে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও প্রধান লক্ষ্য থাকে যেকোনো বিষয়ে উপাচার্যের অনুগত থাকা। আর তা করতে গিয়ে ভারপ্রাপ্তরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন না।
নাম প্রকাশ না করে একটি দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘দায়িত্বটা অস্থায়ী হওয়ায় যেকোনো বিষয়ে জরুরি সিদ্ধান্ত আমি চাইলেও নিতে পারি না। কারণ উপাচার্য চাইলে যেকোনো সময় আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে পারেন। এ অবস্থায় কাজে গতি কমে এসেছে। দায়িত্ব স্থায়ী হলে কাজ করতে সুবিধা হয়।’ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ও অন্যান্য উন্নয়নে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্তরা যেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেভাবে ভারপ্রাপ্তরা পারেন না। তাঁরা কাজ করেন দায়সারাভাবে। তাঁদের কাজে গতিশীলতাও থাকে না। ফলে অন্যদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের পথেও এটি বড় বাধা।’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম (শিক্ষা) অবশ্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তায় সমস্যা দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে প্রশাসনিক কাজে গতি কমে যাচ্ছে। প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম ভালোভাবে চলছে। সবাই পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতোই কাজ করছেন। এখানে যোগ্যতা কিংবা অযোগ্যতার প্রশ্ন নয়। ভারপ্রাপ্ত সাময়িক দেওয়া হয়। এত দিনে হয়তো পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতো; তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে তা হয়ে ওঠেনি।’
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এত শিক্ষক, এত লোকবল, তার পরও সেখানে ভারপ্রাপ্ত থাকার বিষয়টি চিন্তা করতে পারি না। কিন্তু এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়। উপাচার্যই বিষয়টি সম্পর্কে বলতে পারবেন।’