ধর্ষণের প্রমাণ পুলিশের কাছেই দিয়েছি: ঢাবি ছাত্রী

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রী করা ধর্ষণ মামলার প্রেক্ষিতে ছাত্র অধিকার পরিষদ কর্তৃক গঠিক তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন সেই ছাত্রীকে ধর্ষণের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে ছাত্র অধিকার পরিষদের তদন্ত কমিটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন।

পরিষদের ওই তদন্ত কমিটি জানায়, ঢাবির সেই ছাত্রীকে প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের মতো কোন ঘটনার তদন্ত কমিটি প্রমাণ পায়নি। এছাড়া ওই অভিযোগকারীও এ কমিটির কাছে কোন তথ্য প্রমাণ দিতে পারেননি। 

এদিকে, ছাত্র অধিকার পরিষদের তদন্ত কমিটির প্রতিক্রিয়ায় ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ধর্ষণের প্রমাণ আমি পুলিশের কাছেই দিয়েছি। তাদের কাছে (পরিষদের তদন্ত কমিটি) কেন এ প্রমাণ দেব? এসময় তিনি তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে রাজধানীর লালবাগ থানায় মামলা করেন ঢাবির ইসলাম শিক্ষা বিভাগের ওই ছাত্রী। এতে হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি এবং ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়।

পরদিন ওই ছাত্রী রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। তবে ১৭ দিন পার হলেও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেন তিনি। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে, আজ সন্ধ্যায় তিনি হাসপাতাল থেকে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশনে বসেছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে দুপুরে ছাত্র অধিকার পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তদন্ত কমিটি ওই প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপ প্রকাশ করেন। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. বিন ইয়ামীন মোল্লা এবং সদস্য তারেক রহমান ও রাজিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযোগকারীকে (ছাত্রী) বিভিন্ন মিডিয়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী বলে প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া সাংগঠনিক পরিচয়ের মাধ্যমে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে। আদতে অভিযোগকারী ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী নন। কখনো তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।

সেখানে আরও বলা হয়, অভিযোগকারী এজাহারে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করলেও হাসান আল মামুন সেটি অস্বীকার করেছেন। তবে একই বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া ডাকসুর সাবেক ভিপি বিরুদ্ধে ওই মামলায় অভিযোগকারী এজহারে বলা আছে, গত ২৪ জুন নুরুল হক নুরের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসার জন্য নীলক্ষেত দেখা করার কথা উল্লেখ করলেও অভিযোগকারীর সঙ্গে নুরের সরাসরি সাক্ষাৎ হয়নি। তবে আনুমানিক মাস তিনেক আগে অভিযোগকারী একবার নুরুল হক নুরের কাছে ফোন করে ঢাকায় এসে দেখা করবেন বলে জানালেও আর দেখা করেননি।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির প্রধান বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, আমরা ওই শিক্ষার্থীর কাছে বারবার প্রমাণ চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারলে আমরা সেটা বিবেচনা করবো। আমাদের বিশ্বাস, তিনি এই বিষয় নিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র প্ররোচনায় পড়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সুনাম ক্ষুন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেবদনের প্রতিক্রিয়ায় ওই ছাত্রী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করার অধিকার ছাত্র অধিকার পরিষদের নেই। এছাড়া তদন্ত কমিটির প্রধান বিন ইয়ামিন মোল্লা মামলা পরবর্তীতে মামলাকে মিথ্যা বলে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। যিনি আগেই বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তিনি কীভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান নেবেন। এই তদন্ত কমিটি ভিত্তিহীন। আমি এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করছি।

কমিটির কাছে প্রমাণ না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের কাছে ধর্ষণের প্রমাণ কেন দেব? আমি সকল প্রমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেই দিয়েছি।

নুরের সাথে ২৪ জুন নীলক্ষেত মোড়ে দেখা করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ছাত্রী জানান, তিনি (নুর) বিভিন্ন সময় নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন। উনি নিজের জায়গায় স্থির থাকতে পারেন না। উনি একবার বলেছেন আমাকে চিনেন না। আরেকবার বলেছেন আমাকে চিনেন। এমনকি আমার একটি পোস্টে তিনি কমেন্ট ও করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ