ঢাবি শিক্ষার্থীদের ১২ টাকায় পড়ার দাবি ‘সম্পূর্ণ ভুল’: ছাত্র ফ্রন্ট
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘ঢাবিতে শিক্ষার্থীরা ১২ টাকায় পড়ে, ইটস অ্যামেজিং’। এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা বলেন, উপাচার্যের এ বক্তব্যে সম্পূর্ণ ভুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগেই উন্নয়ন ফি (বিভাগ ভেদে ৩ থেকে ১০ হাজার) হল ফিসহ নানা ধরনের ফি আরোপ করা হয়। হিসাব করে দেখা যাবে, প্রত্যেক মাসে শিক্ষার্থীদের উপাচার্যের উল্লেখিত অঙ্কের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি টাকা দিতে হয়। তাছাড়া ক্রমাগতে নামে-বেনামে ফি এর পরিমাণ বাড়ছে, যা অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) সংগঠনের ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এক যুক্ত বিবৃতিতে আরও বলেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এ ধরনের বক্তব্য অপমানসূচক ও একপাক্ষিক। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা সমস্যায় জর্জরিত, হলে হলে টর্চার সেল রয়েছে, দিন দিন অতিরিক্ত ফি আরোপ করা হচ্ছে, খাবারের মান একদম নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম প্রকাশ পাচ্ছে, শিক্ষক নকল করে থিসিস প্রকাশ করছে, ক্রমাগত শিক্ষার মান হ্রাস পাচ্ছে, সেখানে উপাচার্যের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে এসকল সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। সেই দায়িত্ব এড়িয়ে তিনি টাকার সাথে তুলনা করে শিক্ষার দর্শনের যে মহৎ উদ্দেশ্য তা খর্ব করলেন এবং শাসকগোষ্ঠীর শিক্ষা সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরলেন।
বিবৃতিতে তারা বিশেষভাবে বলেন, করোনাকালে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আর্থিক ও মানসিক সংকটে আছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস। যেখানে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছে না। এসব সমস্যার কোন সমাধান না করে উপাচার্যের এহেন মন্তব্য দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক এবং বাণিজ্যিকীকরণের পথকে আরো অবারিত করে দেবে।
“সঙ্গে সঙ্গে তারা বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধের সময়ে উন্নয়নের নামে নেয়া হয়েছে 'মাস্টারপ্ল্যান'। মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাক্ষী এবং ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলো নতুন করে তৈরির কথা বলা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে উপাচার্যের এমন বক্তব্য প্রত্যাহার করে করোনাকালে সকল প্রকার ফি বাতিল, করোনাকালে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দেরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বজায় রেখে উন্নয়নের দাবি করেন।”
গত বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার। শিক্ষার্থীরা এখানে ১২ ও ১৫ টাকায় পড়াশোনা করেন। ইটস অ্যামেজিং, রেকর্ড। বিদেশি শিক্ষার্থীর অনুপাত ও বিদেশি শিক্ষকের অনুপাত কম হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।