ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনলাইনে সনদ উত্তোলনেও ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

  © ফাইল ফটো

গতানুগতিক পদ্বতিতে একাডেমিক সনদ এবং নম্বরপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে নানান ঝামেলা পোহাতে হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের। এই অবস্থার উত্তরণে গত বছরের নভেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সনদ এবং নম্বরপত্র উত্তোলন করার ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এই পদ্বতিতেও নানান ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন অনেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল সমস্যা ও সম্পৃক্ত দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এই পদ্বতিটি এখনো গুছিয়ে উঠা সম্ভব হয়নি। তাই শিক্ষার্থীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে শিগগির এ সমস্যাটি কাটিয়ে উঠবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানা যায়, একাডেমিক সনদ এবং নম্বরপত্র উত্তোলন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রার ভবন, আবাসিক হল ও ব্যাংকে বেশ কয়েকবার দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। এছাড়াও এসব কাগজ তুলতে ১৫-২০ দিন লেগে যেত। শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি এড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রচেষ্টায় গত বছরের নভেম্বর থেকে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে সনদ এবং নম্বরপত্র উত্তোলনের ব্যবস্থা করে।

তবে উদ্যোগের প্রায় ১০ মাস পেরোলেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি এখনো শেষ হয়নি। এখনো হল থেকে ব্যাংক, ব্যাংক থেকে হল, ফের ব্যাংক থেকে হল এবং হল থেকে রেজিস্ট্রার ভবনে দৌড়াদৌড়ি বন্ধ হয়নি তাদের। ডিজিটাল যুগে এসেও সে অ্যানালগ দৌড় থেকে বের হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই সেবা গ্রহণের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার অনলাইন ড্যাশবোর্ড থেকে আবেদন করতে পারবেন। ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করার জন্য শিক্ষার্থীকে প্রথমে সাইন-আপ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের (service.du.ac.bd) সাইটের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে অনলাইনেই তাকে পিডিএফ ফরম্যাটে একটি পে-স্লিপ প্রেরণ করা হবে। এই পে-স্লিপটি প্রিন্ট করে জনতা ব্যাংকের বাংলাদেশের যে কোনো শাখায় ফি জমা দেয়া যাবে (যদিও আগে শুধু টিএসসির জনতা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হতো)। ফি জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী তা ড্যাশবোর্ডে দেখতে পাবেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরও তাৎক্ষণিকভাবে তা জানতে পারবে।

কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষার্থীদেরকে পূর্বের ন্যায় আবেদন ফরম উত্তোলনের জন্য, তথ্য সংশোধনের জন্য বা ফি এর পরিমাণ লিখিয়ে আনার জন্য বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে আসতে হবে না। তবে হল এবং লাইব্রেরি সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা অপরিবর্তিত থাকবে। হলে এসে ক্লিয়ারেন্স নেয়ার মাধ্যমে স্বচ্ছতা এবং জাল সার্টিফিকেট প্রদান বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যক্তিকে সনাক্ত করা যায় বলে দাবি তাদের।

অনলাইন কার্যক্রমে আবেদন ফরম পূরণ করা থেকে শুরু করে সার্টিফিকেট বা মার্কশিট উত্তোলন পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি ছয়টি ধাপে সম্পন্ন হবে। যার অগ্রগতি শিক্ষার্থী তার ড্যাশবোর্ড থেকে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন বলে জানানো হয়। এর পাশাপাশি নতুন এই পদ্ধতিতে হিসাবরক্ষণ অনেক দ্রুত ও সহজ হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়।

তবে ১০ মাসের মাথায় এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগের সুফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, সনদ এবং নম্বরপত্র প্রদানের সাথে সম্পৃক্ত দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির অভাবে এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না অনলাইন কার্যক্রম।

এই ভোগান্তির বিষয়ে দর্শন বিভাগের সদ্য মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অনলাইনে আবেদন করে পে-স্লিপ জমা দিলাম জনতা ব্যাংকে। সেখান থেকে প্রাপ্তির রশিদ নিয়ে হলে দেখাতে হয়। হলে বিবিধ খাতে ২০০ টাকা জনতা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। যদিও এই বিবিধের কোনো ব্যাখ্যা নেই। এরপর জমার রশিদ নিয়ে হলে আসলে প্রাধ্যক্ষ সই করেন। পরে কাগজপত্র জমা দিতে প্রশাসনিক ভবনে যেতে হয়। ডিজিটাল যুগে এসেও আমাদেরকে ঠিকই একাধিকবার হল থেকে ব্যাংকে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে। অনলাইন সেবার উল্লেখযোগ্য কোনো সুবিধা পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না।

একই সেশনের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সার্টিফিকেট বা মার্কসিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে টাকা জমা দেয়ার তারতম্য অনুসারে জরুরি এবং সাধারণ দুইটি সময় দেয়া হয়। সাধারণ সময়ে ১৫ দিন এবং জরুরি হলে সাত দিনের মধ্যে তা প্রদান করা হয়। যদি সার্টিফিকেট পেতেই ১৫ দিন চলে যায় তবে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াটা আসলে কোথায় কাজ করছে?

এই অনলাইন কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ডাকসুর সদ্য সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, অটোমেশনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় আবাসিক হলের বিষয়টাই শুধু আয়ত্বের বাইরে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার বলেও তাদেরকে রাজি করানো যায়নি। কর্মচারীর স্বল্পটা, টেকনিক্যাল কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। হলটা হয়ে গেলেই আমাদের আর এই সমস্যাটা থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, মোবাইল ব্যাকিংয়ের বিষয়টা খুব শিগগির হয়ে যাবে। আমাদের সদ্য সাবেক কোষাধ্যক্ষ এই প্রক্রিয়ায় আমাদের কিছুটা অসহযোগিতা করেছেন। তবে বর্তমান কোষাধ্যক্ষও আন্তরিক। আশা করছি, শিগগিরই অটোমেশনের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আসিফ হোসেন খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আইসিটি সেল অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে না। আমরা টেকনিক্যাল সিস্টেমটা দেখি। আমাদের সিস্টেমটা রেডি আছে। এখন অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ক্রিয়েট হলেই হয়ে যাবে।

অনলাইন পেমেন্টের বিষয় কবে নাগাদ সম্পন্ন করা যাবে- জানতে চাইলে হিসাব পরিচালকের দপ্তরের অধীনে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ের কাজের সাথে সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সমস্যাটা যতটা না বেশি প্রশাসনিক তার চেয়ে বেশি টেকনিক্যাল। অফিসগুলো এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। তাই ভেতরে অরগারনাইজড করতে না পারলে বাইরে সমন্বয় করা যাবে না। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কাজগুলো যদি অটোমেটেড না হয় তাহলে আমরা রিস্কে পড়ে যাই।

মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর সাথে পেমেন্টের টেস্টিং কার্যক্রমও চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে। খুব দ্রুত অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম কার্যকর হবে। তবে কবে হবে এমন কোনো সময় বেধে দেয়া কঠিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কার্যক্রমগুলো আগানো হচ্ছে। শিগগিরই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ