ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ: আন্দোলনে যাচ্ছে ছাত্রলীগ
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের ঘটনায় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের অব্যাহতি প্রাপ্ত আহবায়ক হাসান আল মামুনসহ সংগঠনটির ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
এদিকে ওই শিক্ষার্থীর উপর ঘটে যাওয়া এই অমানবিক ঘটনার বিচার চেয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক এবং বর্তমান নেতারা। শুধু তাই নয়; বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট বোনের সাথে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের জন্য আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
তারা বলছেন, ছাত্রদের একজন সর্বোচ্চ প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মেনে নেয়া যায় না। ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সব ধরণের সহায়তা দিতে প্রস্তুত ছাত্রলীগ। আইনি সহায়তা থেকে শুরু করে সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দিতে প্রয়োজনে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক জিএস গোলাম রাব্বানী বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনাকে রাজনৈতিক মোড়ক দেয়ার হীন চেষ্টায় লিপ্ত ডাকসুর সাবেক ভিপি! অসহায় বোনটির যৌক্তিক শঙ্কা, রাজনৈতিক রং মাখিয়ে ও তথাকথিত জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে পার পেয়ে যেতে পারেন দুষ্কৃতকারীরা! আইনের ছাত্র হিসেবে এটুকু সুনিশ্চিত করছি, ন্যায় বিচারের স্বার্থে অসহায় বোনকে সকল প্রকার আইনি সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস বলেছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অসহায় সেই বোনটির পাশে সব সময় থাকবে। ধর্ষণের বিচার দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, একজন ছাত্র প্রতিনিধির (ভিপি নূর) কথা বলার ধরণ দেখেই বোঝা যায় সে মাদকাসক্ত মানসিক বিকারগ্রস্ত। নিজ সংগঠনের একজন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হলেও তাদের কোনো প্রতিবাদ নেই। তাদের পুরো সংগঠন এই ঘটনায় চুপ করে আছে। এতেই বোঝা যায় তারা এই ঘটনার সাথে জড়িত। তারা তাদের সংগঠনের কর্মীর পাশে না দাঁড়ালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের বোনের ন্যায় বিচারের জন্য মাঠে থাকবে।
ওই মেয়েটির বিচার পাওয়ার জন্য ছাত্রলীগ সহযোগিতা করবে কি না— প্রশ্নের জবাবে সনজিৎ বলেন, আমি ফেসবুকে, বিভিন্ন জায়গায়, যেখানে যেখানে দরকার সরব ছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছোট বোন, সে যে ছাত্র সংগঠনই করুক সেটা করার তার স্বাধীনতা আছে। ওই মেয়ে চাইলে প্রয়োজনে তার সুবিচারের জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি দেব, প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেব।
প্রসঙ্গত, ছাত্র অধিকার পরিষদের নুর-মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কোতওয়ালী থানায় একটি মামলা করা হয়। এর আগে রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, সহায়তা ও হুমকির অভিযোগে এদের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় প্রথম মামলাটি করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিক স্টাডিজ পড়ুয়া এক ছাত্রী ওই মামলা করেন। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী। লালবাগ থানার মামলার বর্ণনায় ওই ছাত্রী হাসান আল মামুনের সঙ্গে প্রেম ও প্রণয়ের কথা জানিয়ে বিয়ে নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ তুলেছেন।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী। একই তরুণীর করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার মূল আসামি পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হাসান।
আর তিন নম্বর আসামি নুরুল হক নুর। বাকিরা হলেন আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহবায়ক মো. সাইফুল ইসলাম, মো. নাজমুল হুদা ও মো. আবদুল্লাহ হিল বাকী।
মামলায় বিবরণে বলা হয়েছে, কোতোওয়ালি এলাকার সদরঘাট হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে এ ঘটনা ঘটেছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টা ৪০ থেকে রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে ঘটনার তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে।