‘আমার মৃত্যুই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দেবে’
সম্প্রতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাময়িক অব্যাহতি প্রাপ্ত আহবায়ক হাসান আল মামুনসহ সংগঠনটির ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তাতে সহায়তার অভিযোগে দুটি মামলা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী।
মামলা দায়েরের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় ওই শিক্ষার্থীকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন অনেকে। শুধু তাই নয়; এই ঘটনায় ওই ছাত্রী মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ তাদের। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী বলেছেন, ‘‘যদি নির্যাতিত হবার পর লাশ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের কাছে মনে হয় যে ঘটনা সত্য না, তাহলে হয়তো আমার মৃত্যুই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দেবে।’’
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ছাত্রী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ওই ছাত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। অনেকেই গণভবনে গিয়ে আপনাকে ‘মা’ ডাকতে পারে। আবার তারাই নির্যাতিতাকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণ করে হুমকিও দিতে পারে। সন্তান হিসেবে নয়; আমি আপনার রাষ্ট্রের একজন নির্যাতিত অসহায় নারী হিসেবে আপনার কাছে ন্যায় বিচার চাই। আর যদি নির্যাতিত হবার পর লাশ না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের কাছে মনে হয় যে ঘটনা সত্য না, তাহলে হয়তো আমার মৃত্যুই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দেবে।
তিনি বলেন, হাসান আল মামুনের বিষয়টি সমাধানের জন্য নুরুল হক নূর যে নীলক্ষেতে আমার সাথে দেখা করতে আসেনি সেটা সে প্রমাণ করুক। তার তো অনেক ক্ষমতা। আমি তো ভুক্তভোগী অসহায়। সে ভন্ডামি করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে তা তাকে বিচার না দিলে আমি বুঝতে পারতাম না। যে লোকের কাছে অনেক আগেই বিচার দিলাম সেই এখন এটাকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা বলে আন্দোলন করছে। আমার লজ্জা হচ্ছে যে এরকম মানুষকে আমি ভিপি বানানোর জন্য ভোট দিয়েছিলাম।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি আমার সব হারিয়েছি। সব হারিয়েও আমি বিচার দাবি করছি। বিচারে যদি কেউ গাফিলতি করেন অথবা এই মামলাটিকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চান তাহলে আমি আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। আমি কি মানুষ না? আমার কি পরিবার, পরিজন, আত্মীয় স্বজন নেই? নাকি যারা জনপ্রিয় কেবল তাদেরই আত্মসম্মান হারানোর ভয় আছে? সাধারণ মানুষের নেই?
দেশের সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার অন্ধভাবে এই বিষয়টিকে বিচার করবেন না। সবকিছু বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবেন যে কারা অপরাধী। একজন অসহায় মেয়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য বারবার সবার কাছে গিয়েও বিচার পায়নি। শেষে নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আর সেই মেয়েকেই লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি শত লাঞ্ছনার বিনিময়ে হলেও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। যেন ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রিয় মুখোশধারী আমার মতো সাধারণ মেয়ের সর্বনাশ না করতে পারে।