টাকার অভাবে স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়তে হয় শাকিলকে!

টাকার অভাবে স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়তে হয় শরিফুল ইসলাম শাকিলকে
টাকার অভাবে স্কয়ার হাসপাতাল ছাড়তে হয় শরিফুল ইসলাম শাকিলকে  © ফাইল ফটো

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) শরিফুল ইসলাম শাকিল মারা গেছেন। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শাকিলের মৃত্যুর পর থেকেই নানা ধরনের তথ্য আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তার কিডনিজনিত সমস্যা ছিলো। আর সেখান থেকেই ব্রেনে সমস্যা হয়। তিনি ২৩-২৪ দিন ধরে হাপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। সেখানেই মারা যান চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, তার চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ওই টাকা ম্যানেজ করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা যান। এ নিয়ে অনেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি টাকার অভাবে তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল থেকে নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয় তার পরিবার।

পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ এর সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি।

তিনি লিখেছেন, ‘বিবার্তার নিউজের শিরোনাম ছিল ‘বাঁচতে চায় ঢাবি ছাত্র শাকিল’। শাকিল বাঁচেনি। গতকাল দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। গত সন্ধ্যা থেকে আমি একজনকে ভীষণ মিস করছি। মাহবুবুল হক শাকিল; আমাদের শাকিল ভাই। আহম্মেদ শরীফ ৩০ লাখ টাকা অনুদান পায় কিন্তু শাকিলের কথা আপার কান পর্যন্ত কেউ পৌঁছে দেয় না।’

বাণী ইয়াসমিন হাসি লেখেন, ‘ছাত্রলীগ নেতা, একটা হলের নির্বাচিত ভিপি মাত্র ২০ লাখ টাকার জন্য মরে যায়! টাকা না থাকায় শাকিলকে বের করে দেয় স্কয়ার হাসপাতাল। পরে ঢাকা মেডিকেলে ধুঁকে ধুঁকে মরে শাকিল। আওয়ামী কর্মীদের কান্না তাদের প্রিয় আপার কান পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার কেউ নেই। তাদের হয়ে কথা বলার মতন একটা লোকও নেই আপার পাশে!’

এ বিষয়ে শাকিলের মেয়াদেই ডাকসুর জিএস’র দায়িত্ব পালন করা গোলাম রাব্বানী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল সংসদের ভিপি, কার্যত উন্নত চিকিৎসার অভাবে মারা গেছে। আর তেতো সত্যটা হচ্ছে, অর্থাভাবেই ছেলেটির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়নি!’

তিনি লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে শাকিলের মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রথম আস্থার জায়গা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপই নেয়নি। অথচ আমাদের নির্ধারিত ডাকসুর বাজেটের প্রায় ৯০ লাখ টাকা এখনো অব্যবহৃত পরে আছে!

শাকিলের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর শাকিলকে রাখতে পারিনি। বাধ্য হয়েই ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে তো আর নিয়ে আসে না। এসময় আমাদেরকে কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকেও সাহায্য করা হয়নি। আমার ভাইকে হারিয়েছি। এর যন্ত্রণা আমি বুঝি।’

জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর মিলেনিয়াম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হয়েছিলেন জটিল রোগে আক্রান্ত শাকিল। পরে ১ সেপ্টেম্বর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে ফোন দেয়া হয় স্কয়ার হাসপাতালের হটলাইনে। সেখানে দায়িত্বশীল কারোর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে জানানো হয়, ‘এ বিষয়ে যে স্যার কথা বলবেন তিনি মিটিংয়ে আছেন। এছাড়া মোবাইলে কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন না।’

২০১৩-১৪ সেশনের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত বছরের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে  ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। তার বাড়ি পাবনা জেলার সদর উপজেলায়।


সর্বশেষ সংবাদ