ঢাবি ছাত্রী ধর্ষণ: কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, কেন?
বিয়ের প্রলোভনে দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে গত সোমবার প্রথম মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী। মামুনকে একই বিভাগের বড়ভাই হিসেবে মামলার নথিতে উল্লেখ করেন তিনি। মামলায় ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে। এ ছাড়াও সে মামলায় অন্যদের মধ্যে আসামি করা হয়েছে নাজমুল হাসান সোহাগ, মো: সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। তাদের মধ্যে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং বাকিদের বিরুদ্ধে সহায়তা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। এর একদিন না যেতেই ফের ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রী। তবে এবার প্রধান আসামি করা হয়েছে পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান সোহাগকে। মামুনকে দুই নম্বর আসামি হিসেবে রেখে বাকি চারজনের সিরিয়াল আগের মামলার মতোই রাখা হয়েছে।
মামলাকারী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী। কয়েক মাস আগে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া অভিযোগের নথিতে তিনি একই বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। তবে এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। মনোমালিন্যের মাত্রা বাড়লে সোহাগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাকে হ্যারেজমেন্টের অভিযোগ করেন। অভিযোগে সোহাগের সাথে প্রেম-সংঘাত বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে অবহিত করেন এবং মামুনের কাছে সোহাগের বহিষ্কারের দাবি তোলেন। মামুন তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। ওই ছাত্রী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগঠন থেকে সোহাগকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। আর বহিষ্কার না করলে পাবলিকলি পোস্ট করে তা জানানোর হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পরে নাজমুল হাসানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা বলা হয়।
এ দিকে, সোহাগের বিরুদ্ধে প্রেমের সম্পর্কের কথা গণমাধ্যমকর্মীদের বলা হলেও ধর্ষণ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে। এসব বিষয়ে মামলাকারী ছাত্রীপ্রদত্ত নথি এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে ঢাবি ছাত্রীর মোবাইলে কল দিলে তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলায় অভিযুক্ত অন্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একেকবার একেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেন মামলাকারী। মামলার আসামিদের মধ্যে কার কোন ভূমিকার কারণে মামলা করা হয়েছে তার বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরেছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা (মামলায় তাকে ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে)। জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মামলাকারী ওই ছাত্রী আমার কাছে অভিযোগ জানায় ১৯ জুলাই। সেখানে তিনি সোহাগকে হ্যারাজমেন্টের জন্য অভিযোগ করেন। পরে বিষয়টি হাসান আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সাইফুল তাকে ৪০ দিন সময় বেঁধে দেয়। এর মধ্যে ওই ছাত্রী সোহাগকে মোবাইলে বিরক্ত করতে থাকেন (মামলাকারী ছাত্রীর নথিতে সোহাগকে বিরক্ত করার প্রমাণ মিলে)। ৪০ দিন বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই দ্বিতীয়বার নতুন করে অভিযোগ তোলেন। এবার নাজমুলকে নির্দোষ উল্লেখ করে হাসান আল মামুনকে অভিযুক্ত করেন তিনি। পরে তাকে বলা হলো, আপনি একেকবার একেকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন এটা তো ঠিক না। আপনার স্ট্যান্ডপয়েন্ট ঠিক করে স্পেসিফিক অভিযোগ তুলে ধরুন।
শুরু থেকেই দুরভিসন্ধি নিয়ে ওই ছাত্রী ছাত্র অধিকারের সাথে মেশার চেষ্টা করেন বলে উল্লেখ করে নাজমুল বলেন, একবার আমাকে বলে ছাত্র অধিকারের নেতাদের সাথে সে সম্পর্ক (পেম) করতে চায়। পরে বললাম- পরিষদেই কেন করতে হবে? আপনার কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে মনে হচ্ছে। পরে কোনোভাবে যাতে আমাদেরকে জড়াতে পারেন এমনই পরিকল্পনা আপনার। এরপর থেকে তার সাথে আর কোনো কথা হয়নি। সম্ভবত আমার সাথে পরিচিত হওয়ার কারণেই মামলায় আমাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আব্দুল্লাহ-হিল-বাকির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ছাত্রী আমাদের গ্রুপে বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে কথা বলত। যা আমাদের সংগঠনের সাথে যায় না। পরে বাকি তাকে গ্রুপ থেকে ব্লক করে দেই। এ কারণেই বাকিকেও এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। আর সাইফুল, সোহাগের সাথে তার ঝামেলা মীমাংসা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই তাকেও এর মধ্যে জড়ানো হয়।
এ দিকে, অপর এক মামলায় লঞ্চের কেবিনে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ করেন একই ছাত্রী। এবার অভিযোগ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে। রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় করা এই মামলা সত্যতা নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মিজানুর রহমান।
মামলার এজহারে ওই ছাত্রী বলেন, জানুয়ারির ৩ তারিখে পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নবাবগঞ্জের একটি বাসায় আমাকে ধর্ষণ করে। এই বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর মামুনের সাথে দেখা করিয়ে দেয়া এবং বিষয়টির সমাধান করার কথা বলে চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি নাজমুল আমাকে একটি লঞ্চে চাঁদপুরে নিয়ে যায়। সেখানে লঞ্চের কেবিনে নাজমুল হাসান সোহাগ আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় আমি কান্নাকাটি শুরু করলে আমাকে নষ্টা মেয়ে হিসেবে উপস্থাপন করতে চায় নাজমুল। পরবর্তীতে গত ২০ জুন আমি বিষয়টি তৎকালীন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরকে জানাই। তিনি তখন বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তা অস্বীকার করেন। এই বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের ভক্তদের দিয়ে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করারও হুমকি দেন নুর। পরে আমার নামে কুৎসা রটাতে মো: সাইফুল ইসলাম মো: নাজমুল হুদা ও আব্দুল্লাহ-হিল-বাকিকে লাগিয়ে দেয়।