১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১:১১

‘আত্মহত্যা’ করেছেন ঢাবি ছাত্রী সুমাইয়া!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া। ২০১৯ সালের ১৪ এপ্রিল পরিণয় সূত্রে মোস্তাক হোসাইনের সাথে সুমাইয়ার বিয়ে হয়। সুমাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকজন এতে বাঁধা দেয়। স্বামীর পরিবারের সঙ্গে এমন দোটানা সম্পর্কের মধ্যেই গত ২২ জুন মৃত্যু হয় সুমাইয়ার। মায়ের ধারণা- সুমাইয়াকে হত্যা করা হয়েছে।

তবে বুধবার নাটোর সিনিয়র দায়রা জজ আব্দুর রহমান সরদারের আদালতে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে সুমাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও মেডিক্যাল বোর্ডের দাখিলকৃত ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন সুমাইয়ার মা মামলার বাদী নুজহাত সুলতানা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা।

নাটোর জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের পর হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাগারে আটক সুমাইয়ার স্বামী মোস্তাক হোসাইন, শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন এবং শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা বেগমের জামিন শুনানি করা হয়। এই তিনজনের মধ্যে শ্বশুর সৈয়দ জাকির হোসেন এবং শাশুড়ি সৈয়দা মালেকা বেগমকে জামিন দেন আদালতের বিচারক। মামলার অপর আসামি সুমাইয়ার ননদ জাকিয়া ইয়াসমিন আগেই জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সুমাইয়া বেগম হত্যা মামলায় গঠিত তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড ভিসেরা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১২ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এরআগে, ৬ জুলাই সিআইডির বিভাগীয় (রাজশাহী) ফরেনসিক ল্যাবে সুমাইয়া বেগমের মরদেহ ‘রাসায়নিক বিশ্লেষণ’ দাখিল করা হয়। সেখানে সুমাইয়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে মেডিকেল বোর্ডের দাখিলকৃত ময়নাতদন্তের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন সুমাইয়ার মা মামলার বাদী নুজহাত সুলতানা ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। সুমাইয়ার মা নুজহাত সুলতানা ও ভাই সালাউদ্দিন বলেন, আসামি পক্ষ প্রভাব খাটিয়ে একটি হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে অভিযুক্তদের জামিন দেওয়া হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, মেডিকেল বোর্ডের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে পুলিশ তাদের সঙ্গে লুকোচুরি করেছেন।

প্রায় দুই মাস আগে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও মামলার বাদী এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। নুজহাত সুলতানা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়নি। কিছুদিন আগেও ভিসেরা প্রতিবেদন সম্পর্কে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে খোঁজ নিতে গেলে তাকে বলা হয় প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি বলে দাবী করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল মতিন বলেন, মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনটি পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরাসরি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল দলের মাধ্যমে সুমাইয়ার ময়নাতদন্তের এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

উল্লেখ্য, ২২ জুন রাতে নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকায় স্বামী মোস্তাক হোসাইনের বাড়ি থেকে ছাত্রী সুমাইয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুমাইয়া শহরের হাজরা নাটোর এলাকার মরহুম সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামীক স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।