করোনার বন্ধে ঢাবি ক্যাম্পাসে ময়লার ভাগাড়!

দীর্ঘদিন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চলছে অনলাইন ক্লাসও, যদিও তাতে আগ্রহ কম শিক্ষার্থীদের। এরইমাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রেখে আসা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আসতে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য। তবে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর বর্তমান হাল দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন তারা। ক্যাম্পাসে আগের মতো শিক্ষার্থীদের পদচারণা না থাকলেও রয়েছে বহিরাগতদের আড্ডাখানা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের বেহাল দশা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও আক্ষেপ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।

গত কয়েকদিনে ক্যাম্পাসে যাওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, এখন ক্যাম্পাসের যেখানে সেখানে ময়লার স্তুপ। যেন পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ময়লা ফেলার জন্য ক্যাম্পাসকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। এসব ময়লা অপসারণে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি নেই বললেই চলে।

ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যাওয়া শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ক্যাম্পাসের টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, ভিসি চত্বর, মল চত্বর, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে, কার্জন হলের সামনের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় সময়ই ময়লা-আবর্জনা এবং মূত্রের গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়েছে।

তাদের অভিযোগ, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। কিন্তু কেন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। অথচ এসব ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের কারণে দূষিত হচ্ছে ক্যাম্পাসের পরিবেশ।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য কার্যালয়ের আশপাশে ময়লা ফেলার জন্য তেমন সুবিধাজনক স্থান না থাকার কারণে ক্যাম্পাসের ভিতরে নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় ময়লা ফেলছেন বহিরাগত আর ভাসমান লোকেরা।

সম্প্রতি ক্যাম্পাসে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘ক্যাম্পাসের যে বেহাল দশা তাতে অবস্থান করার মতো পরিবেশ নেই। টিএসসির মোড়, কলাভবনের সামনে, লাইব্রেরি চত্বর, মলচত্বর এমনকি ভিসি চত্বরের সামনে রয়েছে ময়লার স্তূপ। মূত্রের দুর্গন্ধে চলাফেরা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এগুলো আমলে নেওয়া উচিত। অন্যথায় এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যা আরো জটিল হবে বলে মনে হয়। পরবর্তীতে যখন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরবে, তখন বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি গুরুত্বপূর্ণ বই-খাতা নিতে হলে গিয়েছিলাম। কিন্তু হলে যাওয়ার পথে ভিসি চত্ত্বরের পাশে দেখি ময়লার স্তূপ। সেখান থেকে প্রচুর দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লার স্তুপের কারণে ওই পথে যাতায়াতের সময় অসহনীয় দুর্গন্ধ সহ্য করতে হয়।’ এজন্য কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল পরিচ্ছনাতাবাদী সংগঠন ‘বিডি ক্লিন’। কয়েকদিন পরপর পুরো ক্যাম্পাসের ময়লা পরিষ্কার করতেন স্বেচ্ছাসেবকরা। কিন্তু সম্প্রতি লকডাউনের কারণে কাজ করতে পারছেন না তারা। এরইমধ্যে কাজে অবহেলা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখছি। লকডাউনের কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে আসলেও বেশিক্ষণ অবস্থান করছেন না। আমি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলেছি। আশা করি, এ ব্যাপারে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন।’

এসময় ফুটপাতে মলমূত্র ত্যাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ছিন্নমূল মানুষ ও বহিরাগতরা এ কাজ করে থাকে। বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নেয়া হলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ।’

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে দায়িত্বরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার সুপ্রিয়া দাসকে এ বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কে জানান, ‘আমি বাইরে আছি। ক্যাম্পাসের যত্রতত্র ময়লার স্তূপের বিষয়ে পরবর্তীতে কথা বলবো। এখন আমার পক্ষে কথা বলা সম্ভব না।’


সর্বশেষ সংবাদ