শুধু ঢাবি নয়, পরীক্ষা দিতে চায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরাও
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সেশন জটিলতা কাটিয়ে উঠতে আগে থেকেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। তবে সম্প্রতি ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিকে এ সিদ্ধান্তকে একপক্ষীয় উল্লেখ করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরাও করোনার মধ্যে তাদের বাকি থাকা পরীক্ষায়গুলোতে অংশগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো আয়োজন করতে যাচ্ছে। যাতে করে তাদের শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতায় পড়তে না হয়। অথচ তাদের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তারা রীতিমত সাত কলেজের প্রতি অবিচার এবং উধাসীনতার পরিচয় দিচ্ছেন।
ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে গত ১৮ আগস্ট ঢাবি জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বর্ষের যে সকল শিক্ষার্থীদের লিখিত, ব্যবহারিক ও অন্যান্য পরীক্ষা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি, তাদের ফলাফল চূড়ান্ত করার স্বার্থে মৌখিক পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে নেওয়া হবে।
পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে গতকাল বুধবার ঢাবি জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব বিভাগের স্বল্প সংখ্যক পরীক্ষা নেওয়া বাকি আছে, সেসব বিভাগের অবশিষ্ট পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিতে পারবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই পরীক্ষাগুলো নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খোলা হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি শুধু ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য নাকি এ সিদ্ধান্তের আওতায় সাত কলেজও রয়েছে? এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সাত কলেজের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে গতকাল (বুধবার) কোন আলোচনা হয়নি। এখানে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিষয়েই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাত কলেজের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে।
তবে করোনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও বাকি থাকা পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, সাত কলেজের বেশকিছু বিভাগের ভাইভা না নেওয়ার কারণে তাদের রেজাল্ট হচ্ছে না। ঢাবির সঙ্গে সাত কলেজের এসব শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়ে নেওয়া উচিৎ।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স ২০১৪-১৫ সেশনের ৪র্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে প্রায় ৮ মাস হবে। অনেক বিভাগের মৌখিক পরীক্ষা না নেওয়ার কারণে তাদের ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না। এসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফলাফল না পাওয়া কারণে স্নাতক যোগ্যতা ভিত্তিক অনেক সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আবেদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সরকারি বাঙলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের (২০১৪-১৫) অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মেরাজ হোসেন বলেন, আমাদের ফাইনাল ইয়ারের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে এ বছরের জানুয়ারিতে। এরপর ভাইভা, প্রাক্টিক্যালের জন্য আলাদা ক্লাস নিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। যার কারণে কিছু কলেজে আমাদের বিভাগের ভাইভা নিলেও অধিকাংশ কলেজ এখনো ভাইভা নিতে পারেনি। এজন্য আমাদের ইয়ারের সম্পূর্ণ রেজাল্টা আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা ঢাবির সঙ্গে আমাদের বাকি কলেজগুলোর ভাইভা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে অধিভুক্ত এসব কলেজের ২০১৬-১৭ সেশনের ২০১৭ সালের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা এ বছরের মার্চ মাসে আয়োজন করা হলেও ২টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের পরীক্ষা ২০২০ সালে আয়োজন করেও এখন পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রয়েছে সে পরীক্ষা। যার কারণে এই সেশনের অধিকাংশ পরীক্ষার্থী পরবর্তীতে তাদের বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ নিয়ে চরম অনিশ্চিয়তায় রয়েছেন।
সরকারি তিতুমীর কলেজের মাস্টার্স (২০১৬-১৭) শেষ বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এইচএম জাকারিয়া বলেন, আমাদের মাস্টার্স শেষ পর্বের ২০১৭ সালের পরীক্ষা সেশন জটিলতার কারণে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও ২০২০ সালে মার্চ মাসে শুরু হয়। এরপর ২টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতির কারণে তাও বন্ধ রয়েছে। আমরা ১ বছর মেয়াদী কোর্স ৪ বছরেও শেষ করতে পারিনি। এমন অচলাবস্থা বিশ্বের কোথাও আছে কিনা আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার মত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের বাকি পরীক্ষাগুলো আয়োজন করা হলে সবাই মাস্টার্স সম্পন্ন করতে পারত। এ সেশন জটিলতা আমাদের পরবর্তী ইয়ারগুলোকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে হতাশায় ভুগছি।
এছাড়া আগের সেশনগুলোর জটিলতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনার্স ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরাও। তারা বলছেন, আগের বছরগুলোর ধারাবাহিক সেশন জটিলতার কারণে এর একটা প্রভাব তাদের উপরও পড়ছে। চার বছরের অনার্স ৬ বছরেও শেষ হওয়া নিয়ে সন্দেহ তাদের।
ঢাকা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স (২০১৫-১৬) সেশনের শিক্ষার্থী সৌরভ সাহা বলেন, আমাদের ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার সবার রেজাল্ট হলেও ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, উদ্ভিদ বিজ্ঞান এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের রেজাল্ট এখনো বাকি। আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা গত বছরের অক্টোবরের ২৯ তারিখে শেষ হয়েছে। এসব বিভাগের রেজাল্ট কবে হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।
সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। আসলে কিছু শিক্ষার্থী ভাইভার জন্যে আটকে আছে। তাদের ভাইভা হয়ে গেলে যেকোনো সময় রেজাল্ট পেতে পারে। তাদের আটকে রেখে তো আমাদের কোন লাভ নেই।
তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে; তারা যথেষ্ট আন্তরিক। তারা বলেছে, শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা নিয়ে আমাদের লিখিত আবেদন দিতে। পরে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। খুব শিগগিরই লিখিতভাবে আমরা তাদের কাছে আবেদন জমা দেবো।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সাত কলেজের সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সব কাজেই স্থবিরতা চলে এসেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় এর প্রভাবটা তুলনামূলক বেশি। এটাকে কিছুটা কাটিয়ে উঠতে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনার মধ্যেও পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সাত কলেজ শিক্ষার্থীদেরও কিছু কিছু বিভাগে পরীক্ষা শুরু হয়ে করোনার কারণে আবার বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু বিভাগে ভাইভা বাকি আছে, যার কারণে তারা রেজাল্ট পাচ্ছে না। আমরা এসব বিষয়ে অবগত আছি। পর্যায়ক্রমে ঢাবির সঙ্গে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমরা কাজ করছি।