১৯ আগস্ট ২০২০, ১৮:৩৪

ধর্ষক মজনুই ছিল— মুখ খুললেন ঢাবি ছাত্রী

  © টিডিসি ফটো

ঘটনা ৫ জানুয়ারি ২০২০-এর। এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক পরিস্থিতির শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অভয়া (ছদ্মনাম)। যা নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাস তো বটেই, বিক্ষোভ শুরু হয় দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। কিন্তু কেন এই নীপিড়ন? ধর্ষক কি আসলেই মজনু ছিল? অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনার পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এমন প্রশ্ন হয়তো আজও অনেকের মনে উঁকি দেয়। মূলত এসব বিষয় নিয়েই ঢাবি ছাত্রীর সঙ্গে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিবেদক কথা বলেছে। আলাপচারিতায় তিনি (ছাত্রী) নিজের ভেতরে জমে থাকা নানা ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। যেখানে মজনুর বিচারের বিষয়টি যেমন উঠে এসেছে, তেমনি এসেছে সমাজ পরিবর্তনের কথাও। লিখেছেন মোতাহার হোসেন

মূলত ভবঘুরে হলেও হকারের কাজ করত মজনু। থাকত রাজধানীর বিমানবন্দর রেল স্টেশনের বগিতে। চলতি বছরের কোন ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে নীপিড়ন করে সে। এ ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ-মানববন্ধন হয়। পরে ওই ছাত্রীর বাবা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করলে ঘটনার দু’দিন পর অভিযান চালিয়ে মজনুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ঘটনার সাড়ে ৭ মাস পর আগামী ২৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭। মজনুর বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত শুনানির দিনক্ষণ ঠিক করেন।

জানা যায়, বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কুর্মিটোলা বাস স্টপেজে নামেন তিনি। পরে অন্য যানবাহনের জন্য ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তাঁকে পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে ফুটপাতের পাশের ঝোপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সন্ধ্যায় নীপিড়নের শিকার হন ঢাবির এই ছাত্রী। রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে আলাপচারিতার শুরুতেই নীপিড়কের আসল পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অভয়া বলেন, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিই (মজনু) ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তার ভাষ্য— ‘আমি যখন তাকে শনাক্ত করেছি, তখন কেউ আমাকে চাপ দেয়নি। আমাকে ছবি দেখানো হয়েছিল এবং সময় দেওয়া হয়েছিল। মূলত তখনই আমি আইডেন্টিফাই করেছি এবং নিশ্চিতভাবে আইডিন্টিফাই করেছি। এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই।’

মজনুর বিচার করলেই কি ধর্ষণ থেমে যাবে— এমন প্রশ্ন তুলে অভয়ার আভাস, শুধু বিচার করে ধর্ষণ থামানো যাবে না। তাছাড়া এসব ঘটনার জন্য আমরা, আমাদের সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও কোনো না কোনাভাবে দায়ী। ‘এটাই সত্য যে, মানুষটি যে কারণে ধর্ষক হয়ে উঠল, সেই কারণটা আমরা সমাজ থেকে তৈরি করে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘যে লোকটার বিচার হতে যাচ্ছে, সে কেন ধর্ষক হয়ে উঠবে? তার সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী? এটা যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে দেখব, তার জীবনে আসলে কিছুই ছিল না। তার অপরাধী হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে এবং সেই কারণ সে সমাজ থেকে পেয়েছে। তাই সমাজটা আগে চেঞ্জ করতে হবে। তা না হলে শুধু মজনুদের বিচার করে ধর্ষণ থামানো যাবে না।’

তার বক্তব্য বলেন, বিচার যেমন দরকার আছে, তেমনি সমাজেরও পরিবর্তন প্রয়োজন আছে। ব্যাপারটার দায় শুধু তাদের নয়, আমাদেরও। কারণ, আমরা তাদের জন্য সমাজটা তৈরি করতে পারিনি।

যদিও সবকিছুকে ছাপিয়ে মজনুর সর্বোচ্চ শাস্তিই চাইলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রী। তার বক্তব্য, ডেফিনেটলি সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত। ঘটনাটি যেহেতু অনেক আলোচিত হয়েছে; তাই এর রায়ও আলোচিত হলে ভালো হবে। হয়তো যত বড় শাস্তি হবে, তত বড় মেসেজ এই ধর্ষকের মধ্য দিয়েই অন্যদের কাছে যাবে।

তবে সবকিছুকেই এখন স্বাভাবিক বলে মনে করেন অভয়া। নিজেও ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। পরিবার-সমাজের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন নিয়মিত। তার বক্তব্য— আমার জীবনে কোন কিছুই হয়নি। আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনি আছে।স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।