বন্ধ ঢাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের ‘অদ্ভুত’ টিকটক ভিডিও, তোলপাড়!
‘বান্ধবীর সঙ্গে হেটে যাচ্ছেন এক তরুণ। আরেকজন বসে আছেন রিকশায়। অপরজন কথা বলছেন মোবাইলে। হঠাৎ তিনজনই অদ্ভুত আচরণ করা শুরু করলেন, যেন কেউ তাদেরকে পিটাচ্ছে। এরপরই দেখা গেল, তাদের আরেক বন্ধুকে মারধর করা হচ্ছে। সেখানে গিয়ে একজন তাদের বন্ধুকে মারধর করা ব্যক্তিকে উড়ন্ত ঘুষি মেরে রাস্তায় ফেলে দিলেন। বাকি দু’জন মারধরের শিকার বন্ধুকে ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন। সামনে নায়কোচিত ভঙ্গিতে উড়ন্ত ঘুষি মারা বন্ধুটি হেটে যাচ্ছেন।’
এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। তবে ভিডিওটি বাস্তবের নয়। হালের জনপ্রিয় টিকটকের জন্য তৈরি করেছেন কয়েকজন তরুণ। আর সেটির ভিডিও ধারণ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল ও জগন্নাথ হলের মাঝামাঝি স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের পাশে। আর এতেই ক্ষেপেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যায়ের বিভিন্ন গ্রুপে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনার কারণে বন্ধ ক্যাম্পাসে ‘বখাটে’ টাইপের এসব তরুণ কীভাবে এমন কাজ করছে, বিষয়টি বোধগম্য নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্কর্যের পাশে এমন কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। আর তাদের পোশাক কিংবা চুলের অদ্ভূত রং মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। করোনার মধ্যে স্বাস্থবিধিও মানেনি তারা। এটি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
সোহরাব নাজমুল বলেন, বন্ধ ক্যাম্পাসে এমন কর্মকাণ্ড মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামও নষ্ট হবে। এদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে যাতে কেউ এ কাজ করতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে টিকটক বানানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহসিন নাওয়ার প্রাচী বলেন, ‘ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনেকেই এখন একঘেয়েমি কাটাতে ক্যাম্পাসে যাচ্ছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন সস্তা টিকটক বানানো উপযুক্ত নয়। হাস্যকর ভিডিও বানানোর জন্য নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাটেই এখন টিকটকারদের দেখা যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সেসব ভিডিওর কনটেন্ট খুবই অগোছালো।’ ক্যাম্পাস এরিয়ায় এমন চটকদার ভিডিও বানানো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদার সাথে সাংঘর্ষিক’।
ক্যাম্পাসে টিকটক বানানোর কারণে ক্যাম্পাসের মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে; পাশাপাশি প্রশাসনের অবহেলা আছে বলে মনে করেন আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম নুর। তিনি বলেন, ‘টিকটক বৈশ্বিক মহামারির মতোই একটি রোগ বলে মনে করি। এটাই বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ানক মানসিক রোগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এসব বাজে ভিডিও করার কোন মানে হয় না। এসব বাজে কাজ যাতে না হয়, সেদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি রাখা উচিত। এরকম দৃষ্টিকটু কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করে।’
অনতিবিলম্ব এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিষয়টি নজরে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখার পরই প্রক্টরিয়াল টিমকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ওই তরুণদেরকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘তারা ক্যাম্পাসের নিয়ম ভঙ্গ করেছে, স্বাস্থ্যবিধিও মানেনি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাশে ভিডিওটি করেছে। এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সবাইকে অনুরোধ করছি। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’