ফাঁকা পড়ে আছে স্বাধীনের বইভর্তি টেবিল
প্রচণ্ড মেধাবী ফিরোজ কবির স্বাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস (জিপিএ-৫) পান। এরপর বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঘ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯ম হয়ে ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন ফিন্যান্স বিভাগে।
তার হলের বন্ধু, বড় ভাই ও ছোট ভাইদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের দরিদ্র কৃষক পরিবার সন্তান স্বাধীন। পরিবারের দরিদ্রতা ঘোচানোর দীপ্ত শপথ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে ডেঙ্গু।
এক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে স্বাধীনের রুমে গিয়ে দেখা যায়, তার পড়ার টেবিলটি ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে নানা ধরণের বইয়ে ঠাসা। পাশেই তার শোবার খাটটিও ফাঁকা। রুমে ছড়িয়ে রয়েছে তার ব্যবহৃত নানা ধরণের জিনিষপত্র। শুধু স্বাধীন নেই সেখানে।
রুমের সবাই সারারাত ঘুমাননি। হাসপাতালে স্বাধীনের পাশে শেষবারের মত ছিলেন রুমমেটরা। তারা মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছেন।
স্বাধীনের রুমমেট সুমন রহমান বলেন, ‘স্বাধীন খুবই নরম ও ভদ্র স্বভাবের ছিল। সারাদিন রুমে বসে পড়াশোনা করতো। আমরা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে সে মারা গেছে।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন আরো জানান, ‘নিহত স্বাধীন ছিলেন দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। তার বাবা, ভাইয়ের কৃষিকাজ থেকে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো স্বাধীনের পড়াশোনা। স্বাধীন তার ভাইকে বলতেন, ‘ধানের দাম কমে গেছে। তোমাকে আর মাঠে কাজ করতে দেবো না ভাইয়া। আমি ৭০-৮০ হাজার টাকা বেতন পাবো। তোমাকে টাকা দেবো আর তুমি ব্যবসা করবা।’
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই তার হঠাৎ করে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর হয়। ১৯ জুলাই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান তার রুমমেটরা। মেডিকেলে তার ডেঙ্গু জ্বর ধরা পড়ে। সেদিন রাতেই তার পরিবার তাকে দিনাজপুর ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত ঢাবি ছাত্রী, হাসপাতালে নিতে সাহায্য করলেন না আবাসিক শিক্ষিকা
সেখানে কয়েকদিন রাখার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা মেডিকেলে কয়েকদিন রাখার পর অবস্থার আরো অবনতি হলে তার পরিবারকে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করায়। সেখানে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।