রাবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অবমাননার প্রতিবাদ বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের অবমাননা, ক্যাম্পাসে মব সৃষ্টি ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জিয়া পরিষদ ও ইউট্যাবের শিক্ষকরা। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এসময় জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। জুলাই বিপ্লবের দেড় বছর অতিক্রম হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাইবিরোধী শিক্ষকদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। এ পর্যায়ে এসে কিছু ছাত্র প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা কোনো শিক্ষককে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে মবোক্রেসির মাধ্যমে সম্মানহানি করবে সেটা আমরা মেনে নেব না। যদি কোনো শিক্ষক দোষী হয়ে থাকে তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েও আমরা কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার নিয়োগ যোগ্যতার আলোকে হয়নি। এমবিবিএস ডাক্তাররা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেনি। যেহেতু বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ প্রক্রিয়া যেন বন্ধ রাখেন সেই বিষয়ে উপাচার্যকে আহ্বান জানিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাক্ট চেকিং নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল কিন্তু তারা এ পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। ফলে রাকসুর ছাত্র প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় বিভাগের সভাপতিদের কাছে গিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের খোঁজ করছেন। ফলে ক্যাম্পাসে একধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষকরা লাঞ্ছনার ভয়ে ক্লাসে আসছেন না। এসময় দ্রুত বিষয়গুলো সুরাহা না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের আওয়ামীপন্থি ডিনদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। সকালে তিনি রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন। ছয় ডিনের কেউ ক্যাম্পাসে না থাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে একে একে তাদের সবাইকে কল করেন সালাহউদ্দিন আম্মার। একই সঙ্গে তাদের উদ্দেশ্যে লেখা পদত্যাগপত্রও প্রকাশ করেন। এছাড়া সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্লাস নিচ্ছেন জানতে পেরে তার বিভাগেও যান তিনি।
তবে তাকে না পেয়ে দুপুরে শিক্ষার্থীরা ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের তিনজন ডিনের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। তারা হলেন আইন অনুষদের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক এ এস এম কামরুজ্জামান এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্ল্যাহ। আওয়ামীপন্থি অন্য তিন ডিন হলেন বিজ্ঞান অনুষদে নাসিমা আখতার, প্রকৌশল অনুষদে বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূবিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গতকাল বিকেলে আওয়ামীপন্থি ডিনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈঠকে ডিনরা রুটিন দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন উপাচার্যের কাছে।