জাবিতে শতাধিক শিক্ষকের পদ ফাঁকা, নির্বাচনের আগে নিয়োগে অনিশ্চয়তা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় শতাধিক শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হয়নি কোনো শিক্ষক নিয়োগ। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালাকে কেন্দ্র করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষক নিয়োগ হবে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। এরপর শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে একে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করেন। কমিটি প্রণীত নীতিমালাটি একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচিত হলে ব্যাপক প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। এরপর একাধিকবার সেটি একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচিত হয়। সর্বশেষ আজকের (বৃহস্পতিবার) সিন্ডিকেট মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হতে পারে। এতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মনে করছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কার্যক্রম শুরু করবেন না উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, সরকার ও রাজনীতি, নৃবিজ্ঞান, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, অর্থনীতি, ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও উপাত্তবিজ্ঞান, গণিত, চারুকলা, প্রত্নতত্ত্ব, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগ, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেনসিং অ্যান্ড জিআইএস, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট ও ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে।
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের জ্যেষ্ঠ এক অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বিভাগে ১০০ জন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অফিসে কর্মকর্তাও কর্মচারী সংকট প্রকট। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে দিতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উপাচার্য রহস্যজনক কারণে সকল নিয়োগ বন্ধ রেখেছেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মনে করছেন আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে তারপর নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবেন তিনি। এতে তার জন্য সুবিধা হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল পদে থেকে মানায় না।
জাকসুর শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু উবায়দা ওসামা বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বা কোনো নিয়োগ কার্যক্রম আমাদের স্বার্থগত ও সম্পৃক্ততার বিষয় নয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক থেকে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করবে এবং স্বচ্ছতার সাথে তা পরিচালনা করবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আমি জানি না। নীতিমালার কার্যক্রম কিছুটা বাকি আছে এটি শেষ হলে নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানকে একাধিকবার মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।