ভূমিকম্পের পর মুহসীন হলের শিক্ষার্থীদের কর্মচারী ভবন অবরোধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থীরা জহুরুল হক হল সংলগ্ন কর্মচারী ভবন অবরোধ করেছে। এসময় তারা কর্মচারী ভবনে নিজেদের সিট বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানায়।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টায় ভূমিকম্প আতঙ্কে মুহসীন হলের উচ্চতলা থেকে লাফ দিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হলে, তারা কর্মচারী ভবন অবরোধ করে নিজেদের সেখানে সিট বরাদ্দের দাবি তোলে।
সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেন বলেন, আমরা থাকি মৃত্যুকূপে আর কর্মচারীরা থাকে আলিশানে। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জীবনের কি কোন মূল্য বোঝো না। দীর্ঘদিন আমাদের হল ভঙ্গুর অবস্হায় আছে। অথচ প্রশাসন যেন ঘুমিয়ে আছে। আমাদের এই কর্মচারী ভবন বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অবরোধ চালিয়ে যাবো।
মুহসিন হলের ভিপি সাদিক হোসেন সিকদার বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন এই হলটিকে বসবাসের অযোগ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু ১০ বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নড়াচড়া নেই। নির্লজ্জ ও বিবেকহীন প্রশাসন আমাদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকিতে রেখে নিজেরা নিরাপদে দিন কাটাচ্ছে—এটাই আমরা দেখেছি।আমরা হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের শিক্ষার্থীরা শুধু আজই নয়, এর আগেও বহুবার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। সেইসব ঘটনায় আমাদের বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে—হাত-পা ভেঙেছে, গুরুতর চোট পেয়েছে—এর সবগুলোর দৃষ্টান্ত এখনও আছে।
সাদিক হোসেন বলেন, আজই আমাদের ১৯-২০ সেশনের তানভিরের হাত-পা ভেঙে গেছে। ১৮-১৯ সেশন তানজির তার পায়ের গোড়ালি মারাত্মকভাবে মচকে ফেলেছে, সম্ভবত ভেঙেও গেছে। তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে আমার নিজের বাম পায়েও এমন ব্যথা পেয়েছি যে আমি এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছি না।
মহসিন হল আজ একটি মৃত্যুপুরীতে পরিণত হলেও প্রশাসন আমাদের বারবার দাবি জানানোর পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অথচ আমরা দেখেছি—বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছে। -পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ভঙ্গুর সব হল পুনর্বাসন করার কথা ছিল তাদের—কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।
তিনি বলেন, হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের শিক্ষার্থীরা আজ আমরা আমাদের দাবিগুলো আদায় করেই ঘরে ফিরব—ইনশাআল্লাহ।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আমাদের স্থানান্তর না করে, তবে আমরা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেব; সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদ ভবনে উঠে যাব।আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই—আমাদের জীবনকে আর ঝুঁকির মধ্যে রাখা হলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন, এই বিল্ডিং মূলত ভাড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ফ্ল্যাটগুলো নিয়ে আবার সেগুলো ভাড়া দিয়ে নিজেরা আয়–রোজগার করেন। অথচ এখানে আমরা প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছি।আমরা আমাদের দাবি আদায় করে নিয়েই ফিরে যাব।