১৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১:০৫

ঢাবি অধ্যাপক এরশাদ হালিমের শাস্তির দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান  © টিডিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমের বিরুদ্ধে ‘বিকৃত যৌনাচার’ অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। ঘটনার দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে শিক্ষার্থীরা, যা মুহূর্তেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের পরিবেশ সৃষ্টি করে।

শনিবার ( ১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সেই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য সর্ব মিত্র চাকমা বলেন, ‘আমাদের ৬৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আমাদের মা-বাবা এখানে আমাদের পড়াশোনার জন্য পাঠায়। কিন্তু এখানে এসে শিক্ষকদের হাতে  আমরা নিরাপদ থাকি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক তাদের মহৎ পেশাকে পুঁজি করে তাদের লোভ, লালসা, হিংস্রতা প্রকাশ করে, যা আমাদের জন্য লজ্জার। এরশাদ হালিম ৯২তম ব্যাচ থেকে শুরু করে ১০৪তম ব্যাচের কতজন শিক্ষার্থী যে তার বিকৃত যৌনাচারে শিকার হয়েছে, তা আমরা দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘এখনে রসায়ন বিভাগের যারা আছেন, তাদের তো থানা পুলিশের কাজ করার কথা না, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যখন জানবে একজন শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থী বিকৃত যৌনাচারের শিকার হচ্ছে তখন নিজ উদ্যোগে আইনি ব্যবস্থা নেবেন। আমরা দাবি জানাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলের মাধ্যমে অন্যান্য বিভাগের এমন শিক্ষক দ্বারা কেউ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কি না, সেটি প্রকাশ করা হোক। সেই সাথে এই শিক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

ডাকসুর জিএস এসএম ফরহাদ বলেন, ‘ডাকসুর পক্ষ থেকে আমাদের একটাই কথা যেকোন ধরণের ধর্ষণ ও হ্যারেজমেন্টের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। শিক্ষক-কর্মচারী সে যেই হোক না কেন, যত প্রভাবশালী‌ই হোক না কেন সেই শিকড়কে উপড়ে ফেলব। এই ক্যাম্পাস সমকামীতা, ধর্ষণ ও সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্টের কোনো সুযোগ দেব না। সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে এই গরিমসির পেছনে যারা জড়িত থাকবেন, সেই শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে একশনে যাব।’

আরও পড়ুন: জাবিতে ১০টার পর সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ

তিনি আরও বলেন, ‘ডাকসুর পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাব ,যেহেতু এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং সেই শিক্ষক স্বীকার‌ও করেছেন তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এর ব্যাপারে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা সহ যত ধরণের শাস্তি দেওয়া যায় তা দিতে হবে এবং ভিক্টিমদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’

রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসির অফিস ঘেরাও করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা দাবি জানান ২ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট দিতে হবে এবং  ৪ কার্যদিবসের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। এসময় তারা সকল প্রকার ক্লাস, পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ সেখানে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আনুষ্ঠানিক ভাবে আসার পর রসায়ন বিভাগকে জানিয়েছি দ্রুত অ্যাকাডেমিক মিটিং বসানোর জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমকে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যকম থেকে বহিষ্কার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘যৌন নিপিড়ক সেল থেকে তদন্ত রিপোর্ট আসার পর সিন্ডিকেট সভায় স্থায়ী বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’