কর্মসংস্থানের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যে প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটদের লাগাতার অবস্থান
কর্মসংস্থানের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে টানা পাঁচ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যরা। গত ১৯ অক্টোবর থেকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
চাকরি প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে সরকার আমাদের দিকে কোনো খেয়াল করছে না। যতদিন পর্যন্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে না পারব এবং আমাদের দাবি না মানা হবে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ডাকসুর ভিপি ও এনসিপির নেতারা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন, তবে জামায়াত ও বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পাশে দাঁড়ায়নি।
আব্দুল ওয়াহেদ আরও বলেন, ‘আমরা সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছিলাম।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রতিবন্ধীদের কোথায় কাজ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে গবেষণা করতে হবে।’ কিন্তু দেশে ৬৪টি পিএইচটি সেন্টার ও বিভিন্ন প্রকল্পে প্রতিবন্ধীরা অতীতে কাজ করেছে। এগুলো কিসের গবেষণার ভিত্তিতে চালু হয়েছিল? তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজ সম্পর্কে অবগত নন। আমরা এ বক্তব্যের নিন্দা জানাই।’
আরও পড়ুন: শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে ৫ বিভাগের প্রস্তাবনা চেয়েছে ইউজিসি
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছি, অথচ সরকারের কোনো নজর নেই। বেকারত্ব একটা অভিশাপ, গ্র্যাজুয়েশন শেষে বসে থাকা মানে পরিবারের ওপর বোঝা হয়ে থাকা। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাব না।’
ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ দিন হলো আমরা রাজু ভাস্কর্যে দিন-রাত অবস্থান করছি। কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি—হায়রে স্বাধীন দেশ!’
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে; এমনকি আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতেও তারা চাকরি করে। অথচ এই সোনার বাংলায় ৫৪ বছর পরও মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের রাস্তায় থাকতে হচ্ছে, ভুখা মিছিল করতে হচ্ছে।’
রাইসুল ইসলাম ঢাবি ও সারাদেশের সচেতন নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান, আওয়াজ তুলুন বৈষম্যের বিরুদ্ধে।’
প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েটদের পাঁচ দফা দাবি হলো- প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং প্রতি দুই বছর অন্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ; প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ২% এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে ৫% স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ; দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শ্রুতিলেখক নিজের পছন্দে মনোনয়নের সুযোগ প্রদান।
এছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের ব্রেইল শিক্ষা কার্যক্রম ও পিএইচটি সেন্টারের শূন্য পদে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার; সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করা এবং সাধারণ প্রার্থীদের বয়সসীমা ৩৫ হলে তাদের জন্য ৩৭ বছর নির্ধারণ।