বিশ্ববিদ্যালয়কে আইটি হাবে রূপান্তরের ইশতেহার এজিএস প্রার্থীর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (চবি) দেশের অন্যতম একটি তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) হাবে রূপান্তর করার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন আসন্ন চাকসু নির্বাচনে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানুল আরেফিন।
পড়াশোনার পাশাপাশি চার বছরের বেশি সময় ধরে ডিজিটাল মার্কেটিং ও ওয়েব অ্যানালিটিক্সে ফ্রিল্যান্সিং করে আসা আরেফিন মনে করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি হবে আইটি সেক্টর। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভরসা গার্মেন্টস শিল্প। তবে একজন গার্মেন্টস কর্মীর মাসিক আয় ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মাধ্যমে পুরো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে টেকসই করা সম্ভব নয়। কিন্তু একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার বা আইটি বিশেষজ্ঞ আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসে কাজ করে কয়েকগুণ বেশি আয় করতে পারে। তাই দেশের অর্থনীতির জন্য আইটি খাতকে এখনই শক্তিশালী করা জরুরি।’
২০২১ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত সুলতানুল আরেফিন ইতোমধ্যেই শতাধিক আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছেন একটি বিনামূল্যের ফ্রিল্যান্সিং কোর্স। বর্তমানে এ কোর্সে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, ‘এ কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রথমবারের মতো ওয়েব অ্যানালিটিক্স ও ফ্রিল্যান্সিং লাইফের হাতে খড়ি পাচ্ছে। তারা শুধু স্কিল শিখছে না, বরং ক্লায়েন্ট কমিউনিকেশন থেকে শুরু করে ডলার ব্যাংকে আনা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া শিখে নিচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আইটি হাব বা আইটি ভিলেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা তার। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লকচেইন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন আধুনিক স্কিলে নিজেদের দক্ষ করে তুলবে। এর জন্য তিনি চান— বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় দেশের শীর্ষ আইটি প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের অনলাইন কোর্স উন্মুক্ত করা হবে। প্রতি মাসে অন্তত একটি অফলাইন সেমিনার আয়োজন করা হবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা সরাসরি এক্সপার্টদের কাছ থেকে শিখতে পারবে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত একটি বাধ্যতামূলক আইটি কোর্স চালু করা হবে এবং সেমিস্টার শেষে ইভালুয়েশন টেস্ট নেওয়া হবে।
এ প্রার্থীর দাবি, এভাবে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৩–৬ মাসের মধ্যে সহজ স্কিলে, আর ৬–১২ মাসের মধ্যে জটিল স্কিলে মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করতে সক্ষম হবে। কো-ওয়ার্কিং স্পেস থেকে টেক ইকোসিস্টেম ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কো-ওয়ার্কিং স্পেস তৈরিরও প্রস্তাব দিয়েছেন আরেফিন। তার ধারণা, এখানে শিক্ষার্থীরা টিম তৈরি করে ব্রেইনস্টর্মিং, ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও টিমওয়ার্কের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। যখন শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে দক্ষ হয়ে উঠবে, তখন তারা সিনিয়রদের কোম্পানিতে কাজ করবে এবং নতুনদের প্রশিক্ষণ দেবে। এতে করে একটি উইন-উইন সিচুয়েশন তৈরি হবে।
তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩–৪ বছরের মধ্যে শিক্ষার্থীরা ফ্রিল্যান্সার থেকে কোম্পানি সেটআপে চলে যাবে। সেখান থেকে নতুন আইটি কোম্পানি ও টেক এজেন্সি গড়ে উঠবে। কোম্পানিগুলো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষ শিক্ষার্থীদের রিক্রুট করবে, যাতে চাকরির সুযোগ সহজে তৈরি হয়।
দীর্ঘমেয়াদি সুফল
তার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন প্রজন্মের আইটি উদ্যোক্তা তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের সুযোগ পাবে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব অনেকাংশে দূর হবে। যারা ২০১০-১১ সালে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিল এবং ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে, তারা আজ বাংলাদেশের বড় বড় আইটি কোম্পানির মালিক। তারাই আজ কোটি কোটি ডলারের আইটি সার্ভিস ও সফটওয়্যার এক্সপোর্ট করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা যদি এখনই এ যাত্রায় অংশ নেয়, তাহলে বাংলাদেশ শিগগিরই আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে পারবে।’
নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে তিনি বলেন, আসন্ন চাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীরা আমাকে জয়ী করলে আমার এ উদ্যোগ আরও সহজ হবে বলে।