ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া সেই শিক্ষার্থী লড়বেন চাকসুর আইন সম্পাদক পদে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মনোনীত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদলের বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সাজ্জাদের সঙ্গে তর্ক করা আব্দুল্লাহ আল সাকিব হয়েছেন এই প্যানেলের আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক প্রার্থী। ‘ছাত্রদলের মত লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন চাই না’ বলা সেই শিক্ষার্থী দলীয় প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল সাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে তার নাম সাকিফ রহমান। গত বছরের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা এই শিক্ষার্থী গণঅভ্যুত্থানের পর লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতা শুরু করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, আব্দুল্লাহ আল সাকিব ছাত্রদলের রাজনৈতিক ‘অধিকার চর্চা’তেও বিশ্বাসী ছিলেন না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান ভিপি প্রার্থীর সঙ্গে এ নিয়ে ফেসবুকে প্রকাশ্যে তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে দেখা গেছে, গত বছরের ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক একটি গ্রুপে পোস্ট দিয়েছিলেন ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা নিয়ে তখন বিতর্ক তুঙ্গে ছিল। ওই পোস্টে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় লিখেছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করবে কি করবে না, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সিদ্ধান্ত নিবে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্তবুদ্ধিচর্চার আঁতুড়ঘর, জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জায়গা না। এখানে বিভিন্ন দল-মত থাকবে। এ বিশ্ববিদ্যালয় সবার। মনে রাখবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আগামীর দেশ পরিচালনার মেধাবী নেতৃত্ব বের হয়ে আসে। আজ যে ছাত্রদের নেতৃত্বে জনতার গন অভ্যুত্থান হয়েছে তারাও বিশ্ববিদ্যালয় সংগঠন করে আসা। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কোন স্বৈরচারী সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য না।’
পোস্টটিতে কমেন্ট করেছিলেন বর্তমান ছাত্রদল প্যানেলের আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল সাকিব। তিনি লিখেছিলেন, ‘আইন বিভাগ থেকে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ছাত্ররাজনীতি চাই না। অধিকার চর্চা ক্যাম্পাসের বাইরে করুন, ক্যাম্পাসে শুধু ছাত্র থাকতে দিন, প্লিজ।’
অপর এক কমেন্টে সাকিব লিখেছিলেন, ‘নেতৃত্ব ছাত্র সংসদ থেকে বের হবে ভাই। আপনি ছাত্রদল করেন করুন সমস্যা নাই, কিন্তু এসব কথা বলে বিএনপির সমর্থক কমাবেন না।’ এই কমেন্টের জবাবে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় লিখেছেন, ‘সেটাই, ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। ছাত্ররাই সিদ্ধান্ত নিক।’ তবে এর জবাবে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়কে মেনশন করে সাকিব লিখেছিলেন, ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমরা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণ চাই না। আমরা চাই দলবিহীন, স্বার্থবিহীন নেতৃত্ব।’
এর জবাবে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় লিখেছিলেন, ‘একজন ছাত্র লেজুড়ভিত্তিক রাজনীতি করতে চাইলে তাকে বাধা দেওয়ার বা হস্তক্ষেপ করার অধিকার আছে? এটা কি আরেকটা স্বৈরতন্ত্র না?’ এ প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় সাকিব লিখেছেন, ‘লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি আমাদের এতগুলো ভাইয়ের প্রাণ নিল। আর আপনি এখনও সাদ্দামের (ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি) মতো মুখস্ত বুলি আওড়ান? আবারও বলছি আপনাদের এই ধরণের কথাবার্তা বিএনপির সমর্থক কমানো বাদে বাড়াচ্ছে না।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কিছু হয়েছে কিনা আমার মনে পড়ছে না। আমি নিশ্চিত না এরকম কখন হয়েছে।
পরে স্ক্রিনশটটি সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়ের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এর কোনো জবাব দেননি। এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কখনও এ ধরনের কিছু হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নই।