জাকসু নির্বাচন বিতর্কিত করার নেপথ্যে বিএনপিপন্হী শিক্ষক রাজনীতির দ্বন্দ্ব?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনার কাজ চলছে। জাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগ ছাত্রসংগঠনগুলোর। ভোট বর্জন শাখা ছাত্রদল ও বামসংগঠনের একাংশ। তবে জাকসু নির্বাচন বিতর্কিত করার নেপথ্যে শিক্ষক রাজনীতির দ্বন্দ্ব বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম কর্মী কামরান সিদ্দীকী।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সামাজিক মাধ্যমে জাকসু নির্বাচন নিয়ে এক স্ট্যাটাট দেন তিনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে কামরান সিদ্দীকী বলেন, ‘জাকসুতে কিছু অব্যবস্থাপনার নেপথ্যে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের গ্রুপিং! জাহাঙ্গীরনগরে আজকে সবচেয়ে বড় নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে ৩ শিক্ষকের নির্বাচন বর্জনের মাধ্যমে, যারা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে একদম শেষ মুহূর্তে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। এরা সবাই বিএনপিপন্থী শিক্ষক।
প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার পরও শিক্ষকরা রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু এই নজিরবিহীন কর্মটি তারা সম্পন্ন করেছেন মূলত বর্তমান ভিসিকে বেকায়দায় ফেলতে। এরমধ্যে গণিত বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম একটি হলের প্রভোস্ট। মূলত বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দলের ফল হিসেবেই আজকে জাকসুতে বেশ কিছু অব্যবস্থাপনা হয়েছে, যদিও তা শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি।’
আরও পড়ুন: জাকসু নির্বাচনের ৫ হলের ফলাফল ঘোষণা
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসানকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কৃটকৌশলের আশ্রয় নেন বিএনপিপন্থী কিছু শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদগুলো—ভিসি, প্রভোস্ট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ বেশিরভাগ পদেই বিএনপিপন্থী শিক্ষকরাই রয়েছেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনেও জাতীয়তাবাদী শিক্ষকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারপরও নির্বাচন শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ছাত্রদলের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর তিনজন বিএনপিপন্থী শিক্ষক নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারার অভিযোগ তুলে।’
‘এ পরিকল্পনার অন্যতম সমন্বয়কারী ছিলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট নজরুল ইসলাম। তার প্রভাবে ওই কেন্দ্রে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায় এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। নির্বাচন ঘিরে এই জটিলতার গভীরে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগসংক্রান্ত পুরনো দ্বন্দ্ব। যেসব শিক্ষক তখন ভিসি পদে নিয়োগ পাননি, তারাই পরবর্তীতে সক্রিয়ভাবে নানা ষড়যন্ত্রে জড়ান। ভিসি হওয়ার পর অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রশাসনিক দায়িত্বে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দিলেও, যারা ভিসি হতে পারেননি, তারা ক্ষুব্ধ হন এবং জাকসু নির্বাচনকে ব্যর্থ করার পরিকল্পনা নেন।’
‘নির্বাচনের অনিয়ম সামনে এনে আন্দোলনের মাধ্যমে উপাচার্যকে বিতর্কিত করা এবং পদত্যাগে বাধ্য করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষক নিয়োগে হাত দেননি অধ্যাপক কামরুল। এজন্য বিএনপি শিক্ষকদের ওই গ্রুপটি বারবার উপাচার্যের উপর চাপ তৈরি করেন। কিন্তু তিনি নতিস্বীকার না করায় তারা নতুন ভিসি করার নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক এসব অপতৎপরতায় যুক্ত আছেন। তারা নির্বাচনে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব তো পালন করেননি এবং নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও ঘাটতি ছিল।
‘নির্বাচন কমিশনে থাকা এই চক্রের সহযোগীরাই এসব অপকর্ম করেছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর নতুন করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, তাই এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী পন্থীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিএনপি এবং আওয়ামীলীগের এই চক্রটি এর আগে জুলাই মাসে গণহত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত শিক্ষকদের পক্ষে বিবৃতি দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। ভোট গণনা শুরু হয়েছে এবং আশা করি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার ফল বিশ্ববিদ্যালয় পাবে।’
‘ডাকসু নির্বাচনের পরপরই আমি বলেছি, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই ছাত্রদল তাদের বিজয়ের সূচনা করেছেন। কারণ প্রচলিত রাজনীতির খোলনলচে পাল্টে দিয়েছে জুলাই। ফলে ছাত্রদল বর্তমানে প্রস্তুত না থাকলেও স্বল্প সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তটি ছিল অসাধারণ এবং সাহসী। দীর্ঘমেয়াদে তারা এর ফল পেতো। তবে তাদেরকে অবশ্যই রাজনীতির চর্চায় গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। পুরনো ধারার বস্তাপঁচা রাজনীতি জেনজি আর গ্রহণ করবে না। ছাত্রদল আজকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। তারা কতিপয় ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষকের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে। আশা করি তারা ভুল বুঝতে পারবে। এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিবেন।’