তিন দশকের অপেক্ষা ঘুচবে কাল, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্রদল-শিবিরসহ ৮ প্যানেল
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোট গ্রহণের মাধ্যম শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ঘুচবে। নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে গতকাল বুধবার। এখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ; কারা শেষ মুহূর্তে ভোটের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবেন। তবে শিক্ষার্থীরা একক কোনো প্যানেল বা ছাত্র সংগঠনকে এগিয়ে রাখছেন না। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, যারা নির্বাচন করছেন, সবাই নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে। তবে ভোটাররা শেষ মুহূর্তে যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচিত করবেন।
এবারের জাকসু নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক মিলে মোট ৮ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষার্থীরা। এক মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’, বাগছাসের ‘সম্মিলিত ঐক্য ফোরাম’, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন একাংশের সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল ও আরেক অংশের ‘সংশপ্তক পর্ষদ’। এ ছাড়াও রয়েছে তিনটির স্বতন্ত্র প্যানেল।
আপাতত শিক্ষার্থীরা এককভাবে কোনো প্যানেলকে সমর্থন করার কথা না ভাবলেও তারা ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়কে বিবেচনায় রাখছেন। সেগুলো হলো জুলাই আন্দোলনের স্প্রিট, প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মনোনীত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দলীয় কর্মকাণ্ডকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ভোটাররা।
অনেকে গতকাল হওয়া ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে মনে করলেও এখানে খুব বেশি নিয়ামক হবেন না বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাইরে দলীয় রিজার্ভ ভোটও নির্বাচনের ফলাফলের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা কিছুটা এগিয়ে আছেন।
শিক্ষার্থীদের ভাবনায় এখন পর্যন্ত সহসভাপতি (ভিপি) পদে এগিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ মনোনীত প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জল, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ জিতু, ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থী শেখ সাদী হাসান ও ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থী আরিফ উল্লাহ।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আলোচনায় রয়েছে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের মনোনীত জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখীসহ বাগছাসের মনোনীত প্রার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই নারী। অধিকাংশ নারী শিক্ষার্থীই দলীয় পেরিফরির বাইরে হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তাদের ভোটই হতে বড় ফ্যাক্টর।
জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সার্বিক আয়োজন সম্পন্ন করেছে। আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২১টি হলের ২২৪টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১০টি ছাত্রী হল ও ১১টি ছাত্র হল। প্রতিটি কেন্দ্রে ১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭ পোলিং অফিসার ও ৬৭ সহকারী পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ব্যালটে ভোট দেবেন ভোটাররা। বিশেষ ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা করা হবে।
নির্বাচনী সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পোশাক ও সিভিল পোশাকে প্রায় ১ হাজার ২০০ পুলিশ সদস্য ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবেন। নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটকেন্দ্র ও হলে দায়িত্ব পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী। পাশাপাশি ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাস এটি ১০তম জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ১১ হাজার ৮৯৭ শিক্ষার্থী ভোট প্রদান করবেন। এই নির্বাচনই হবে জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চা দৃষ্টান্ত।