জিএস হলে ১০০ দিনে ১৭ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি হামিমের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমের ব্যলট নম্বর ১৭। তার এই ১৭ নম্বর ব্যলট থেকে নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনের ১৭টি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন তিনি। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে জানান।
ফেসবুকে শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, ১৭ টি কাজের ভেতর ৮-১০ টি কাজ আমি জিএস নির্বাচিত না হলেও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য নিয়ে ধীরে ধীরে ব্যক্তি উদ্যোগে সম্পন্ন করার চেষ্টা করব। তবে শিক্ষার্থীরা আমাকে ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করলে আমি শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে প্রথম ১০০ দিনের ভেতর এই ১৭টি কাজই প্রায়োরিটি ব্যাসিসে বাস্তবায়ন করব ইনশাআল্লাহ। আমার ১০০ দিনের কর্ম পরিকল্পনায় বাস্তবায়নযোগ্য কাজগুলোই সবার সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
ফেসবুকে হামিম তার প্রথম ১০০ দিনের ১৭টি কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। সেগুলো হল:
ডিজিটালাইজেশন ইন এডুকেশন
১. ইন্ট্রোডিউসিং এলএমএস- বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এলএমএস সিস্টেম চালু করে সেটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন স্কিল ও সার্টিফিকেশন (আইইএলটিএস, জিআরই, গ্রাফিক ডিজাইন, কম্পিউটার লিটারেসি ইত্যাদি) এর ফ্রি কোর্স করানোর ব্যবস্থা করা হবে।
২. ফাংশনাল ডিইউ অ্যাপস- রেজিস্ট্রার বিল্ডিং-এর বিভিন্ন প্রক্রিয়া যেমন পেমেন্ট করা, ডকুমেন্ট উত্তোলনের আবেদন করা ইত্যাদি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিইউ অ্যাপসের মাধ্যমে সহজ করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৩. টিসার্চ’স ইভালুয়েশন সিস্টেম- শিক্ষকদের পড়ানোর মান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে 'শিক্ষক মূল্যায়ন' পদ্ধতি চালু করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ক্য়ারিয়ার অ্যান্ড হায়ার স্টাডিজ
৪. ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেন্টার- বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ‘ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেন্টার’ তৈরি করা হবে যেন শিক্ষার্থীরা স্নাতক পরবর্তী ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত সব ধরণের সহায়তা পেতে পারে। একটি রাইটিং সেন্টার- যা ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একাডেমিক রাইটিং ডেভেলপমেন্টে সাহায্য করবে এবং রিসার্চ পেপার লেখতে ও একাডেমিয়াতে ক্যারিয়ার গড়ার পরামর্শ ও নানা ধরণের সহযোগিতা করবে। অপরটি হলো স্কলারশিপ সেন্টার- যা শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়া লেখার (যেমন মাস্টার্স, পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট) যাবতীয় তথ্য, স্কলারশিপ প্রোগ্রাম ও অন্যান্য সাহায্য করবে। এই গাইডেন্স সেন্টারটি হবে সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত।
৫. আরএ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিয়া কোলাবোরেশন- রিসার্চ ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর জন্য প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে যত বেশি সম্ভব শিক্ষার্থীদেরকে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ ও ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশন এবং ইন্টার-ইউনিভার্সিটি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৬. আউটওয়ার্ড ক্রেডিট ট্রান্সফার অ্যান্ড এক্সচেন্জ প্রোগ্রাম- বিভিন্ন কারণে যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়, তাদের জন্য ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’ ব্যবস্থা চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন: ঢাবির ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার: জরিপ
ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ক্যাম্পাস
৭. হল এন্ট্রি আনটিল ১২ এএম ইন ফিমেইল হল- নারী শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা রাত ১২ টায় উন্নীত করা ও প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আরও পরে প্রবেশের ব্যবস্থা করা হবে।
৮. ২৪/৭ হটলাইন অ্যান্ড হ্যারাজমেন্ট সেল- ক্যাম্পাসে নারী চলাচল স্বাচ্ছন্দ্যময় (পোশাক, ধর্ম ও উৎসব পালনের স্বাধীনতা) করতে ২৪/৭ হটলাইন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে গেলে অ্যান্টি হ্যারাসমেন্ট সেল ও ভিক্টিম সাপোর্ট টিমের ব্যবস্থা করা হবে।
৯. টেমপোরারি সিট বুকিং ইন ওইমেন হল- অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা নিজে এবং সকল শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যদের জন্য সাময়িক সিট বুকিং এর ব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
সেইফ অ্যান্ড সিকিউরড ক্যাম্পাস
১০. কেয়ার অ্যান্ড মেডিকেল কর্ণার- ক্যাম্পাসে এবং প্রতিটি হলে কেয়ার এন্ড মেডিকেল কর্নার রাখা হবে যেন শিক্ষার্থীরা জরুরি ঔষধ, স্যানিটারি প্যাড, চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে পারে।
১১. অডিট কমিটি অ্যান্ড মোবাইল কোর্ট ইন ক্যান্টিনস- ন্যায্যমূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ডিপার্টমেন্ট ক্যান্টিনের খাবারের মান নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি অডিট কমিটি গঠন এবং মাসে অন্তত একবার বিনা নোটিশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
১২. স্পেশাল ফ্লোর ফর মাইনোরিটিজ ইন ওইমেন হল- শিক্ষার্থীরা যেন নিজ রুমে ধর্মীয় আচার পালনে ব্যাহত না হয়, সেভাবেই রুমমেট নির্ধারণের ব্যবস্থা রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
১৩. জোন ক্লাসিফিকেশন- বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াকে গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ। বিশেষ করে টিএসসি এরিয়া সংলগ্ন মেয়েদের হলের পাশে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
১৪. ওয়াশরুম মেইনটেনেন্স- হল ও ক্যাম্পাসের ওয়াশরুমগুলোতে পর্যাপ্ত টয়লেট্রিজ আইটেমের ব্যবস্থা করা হবে এবং সকল ওয়াশরুমের হাইজিন নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনভাবে পরিচালিত মেইন্টেন্যান্স টিম গঠন করা হবে
ডিইউ ফর অল
১৫. অ্যাডিশনাল রুটস, ডাউনট্রিপ আনটিল ১২ এএম ইফ পসিবল- সপ্তাহে প্রতিদিনই বাস সার্ভিস চালু রাখার জন্য ও দূরবর্তী স্থান (নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর ইত্যাদি) এর শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধাজনক ট্রিপের ব্যবস্থা করা ও ট্রিপ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের জন্য জোরদার আলোচনা করা হবে।
১৬. পেট্রোনাইজিং অ্যাপলিটিকাল অ্যান্ড ক্লাবস- যেসকল অরাজনৈতিক সংগঠন ও ক্লাব শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করে, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এম্পাওয়ার করা হবে।
১৭. অ্যালামনাই ডাটাবেজ অ্যান্ড ক্লাব- বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিশাল অ্যালামনাই নেটওয়ার্ককে বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাথে কানেক্ট করার জন্য একটি ফাংশনাল অ্যালামনাই ডাটাবেজ ও ক্লাব গঠন করা হবে যার অধীনে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়েলফেয়ার ফান্ড ও লিগাল এইড সার্ভিস গঠন করা হবে।