চাকসুর আচরণবিধি প্রকাশ, ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। এরই মধ্যে তফসিল ও আচরণবিধি প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলাফল পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) চাকসু নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা, ২০২৫’ শিরোনামে আচরণ বিধি প্রকাশ করা হয়। বিধি অনুযায়ী প্রার্থী, ভোটার ও কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য ১৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার
মনোনয়নপত্র নেওয়া কিংবা জমা দেওয়ার সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। প্রার্থী পাঁচজনের বেশি সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে আসতে পারবেন না। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় অন্য কোনো প্রার্থী বা ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা অন্য কোনো সংগঠনের কেউ কোনো প্রকার বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবেন না। প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হবে। ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে।
যানবাহন ব্যবহার
নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। তবে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় শুধু কমিশন থেকে অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত যানবাহন নির্বাচনী এলাকায় চলতে পারবে।
প্রচার-প্রচারণা
প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার দিন থেকে নির্বাচনের এক দিন আগে পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচারণা করতে পারবেন। প্রতিদিন প্রচারের সময় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে রাত ৯টার পর কোনো ধরনের মাইক ব্যবহার করা যাবে না। নির্বাচনের ভোটার বা প্রার্থী ব্যতীত অন্য কেউ কোনোভাবেই কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালাতে পারবেন না। ক্লাস-পরীক্ষাসহ শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যাবে না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার
নির্বাচনী প্রচারপত্রে, প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব, মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি ও উসকানিমূলক অথবা কোনো অসত্য তথ্য ছড়ানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন কোনো বক্তব্যও ব্যবহার করা যাবে না।
সভা-সমাবেশ
কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ কোনো সভা-সমাবেশ কিংবা শোভাযাত্রা করতে চাইলে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। প্রক্টরকেও এ বিষয়ে জানাতে হবে। ২৪ ঘণ্টা আগেই এ অনুমতি নিতে হবে। প্রচারণায় কোনো প্রার্থী নিজের সাদাকালো ছবি ছাড়া লিফলেট বা হ্যান্ডবিলে অন্য কারও ছবি বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে না।
পোস্টার-লিফলেট বিতরণ
নির্বাচনী প্রচারণায় শুধু নিজের ছবি-সংবলিত সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ব্যবহার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে পোস্টারের আকার অনধিক ৬০ সেমি. বাই ৪৫ সেমির বেশি হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও হল এলাকায় অবস্থিত কোনো প্রকার স্থাপনা, দেয়াল, যানবাহন, বেড়া, গাছপালা, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের খুটি বা অন্য কোনো দণ্ডায়মান বস্তুতে পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল লাগানো যাবে না।
উপঢৌকন প্রদান
কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো সংগঠন বা কোনো ব্যক্তি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো চাঁদা, অনুদান, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি করতে পারবেন না। ভোটারদের কোনো ধরনের পানীয় বা খাদ্য পরিবেশন করা যাবে না। ভোটারদের কোনো উপঢৌকন বা বকশিশও দেওয়া যাবে না।
উসকানিমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি
নির্বাচনী প্রচারণায় আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া, গুজব ছড়ানো বা কোনো ধরনের উসকানিমূলক বা মানহানিকর কিংবা লিঙ্গ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
প্রচারণার মেয়েদের হলে এবং ছেলেদের হলে প্রবেশ
নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে ছেলে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা মেয়েদের হলে ও মেয়ে প্রার্থী/শিক্ষার্থীরা ছেলেদের হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে শুধু প্রজেকশন সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ
নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, রিটার্নিং অফিসার থেকে অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট দেওয়া পর ভোটারদেরও অবিলম্বে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ভোটার রসিদও কেউ বিতরণ করতে পারবেন না।
গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার ইস্যু করা পরিচয়পত্র দেখিয়ে অনুমতি সাপেক্ষে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন ও ছবি তুলতে পারবেন। তবে তাঁরা ভোটকেন্দ্রের বুথে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বহিরাগত প্রবেশ
নির্বাচনের দিনে ভোটার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ব্যতীত ক্যাম্পাসে অন্য সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।
দেশি অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন
নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন চলাকালে বিস্ফোরক, দেশি অস্ত্র (লাঠিসোঁটা, রড, হকিস্টিক, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি) ও আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ দেশীয় অস্ত্র বা অন্য কোন আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তি ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার প্রয়োজনবোধে স্বপ্রণোদিতভাবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থাাও গ্রহণ করতে পারবে। কোন প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থীতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
ডোপ টেস্টের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের জন্য একটি কার্ড প্রদান করব। প্রার্থী সেই কার্ড নিয়ে চবি মেডিকেলে টেস্টের জন্য নমুনা দিয়ে আসবে। টেস্ট পজিটিভ হলে প্রার্থীতা বাতিল করা হবে। ডোপ টেস্টের ফি প্রার্থীকে বহন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রার্থীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া। যেন তার আত্মসস্মান বজায় থাকে। প্রার্থীকে তার রিপোর্টের বিষয়ে একাকী জানানো হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। সবশেষ ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১২ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।