চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ছাত্রদল-শিবিরের
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে তাদের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল। অন্যদিকে ছাত্রদলের এসব কর্মকান্ড চাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ছাত্রশিবির।
বুধবার (২৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল এবং দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহিদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে চাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রশিবির।
ছাত্রদলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বিভিন্ন সময়ে একটি দলের প্রোগ্রামাদিতে উপস্থিত থাকেন এবং তিনি চাকসু নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তাদেরকে কটূক্তি করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন।
জানা যায়, গত সোমবার +২৫ আগস্ট) প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে তাদের নির্বাচনের সকল ধরণের কাজ থেকে অব্যাহতি চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয় ছাত্রদল। প্রক্টর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে থাকলেও রেজিস্ট্রার নির্বাচনের কোনো দায়িত্বে নেয় বলে জানায় প্রশাসন।
এবিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, চাকসু ছাত্রদের সাথে সম্পৃক্ত একটি বিষয় কিন্তু এবিষয়ে ছাত্রদল কোনো ধারণায় রাখেনা। তারা কাল্পনিকভাবে একটা স্ট্যাটমেন্ট দিয়েছে যেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একজন মানুষ যদি কমিটিতে থাকে তাহলে তাঁর অব্যাহতির প্রশ্ন উঠতে পারে আমি যেখানে কমিটিতেই নেই সেখানে অব্যাহতির বিষয় কিভাবে আসবে? তারা যেটা করেছে এতে আমার মানহানি হয়েছে। আমি আইনজীবীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবো।
ছাত্রদলের এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে ছাত্রশিবির জানায় প্রশাসনের পক্ষপাতীত্বের বিষয়টা একটি অবান্তর অভিযোগ। আসলে তারা বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র সামনে আনছে যাতে চাকসু বানচাল করতে পারে। পাশাপাশি অনৈতিক সুবিধা নিতে না পারার কারণে তাঁদের (প্রক্টর- রেজিস্ট্রার) পদত্যাগের দাবি তুলছে। যারা বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী শিক্ষক আছেন তাঁরাও তো তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে যায়, তারা তো প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় আছে, সেক্ষেত্রে তাদের সমস্যা হচ্ছে না কোনো?
এবিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, প্রক্টর-রেজিস্ট্রার যেভাবে অশালীন বক্তব্য রাখছেন, সেটা আমরা ছাত্র হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। আমরা দেখলাম যে রেজিস্ট্রার আইনি ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু তিনি আসলে কাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন, এটাই আমরা বুঝতে পারছি না। চাকসুর কমিটি তো রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরেরই হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতেই পারি। সে জায়গা থেকে এই ধরনের অশালীন মন্তব্য করায় আমরা তাদের পদত্যাগ দাবি করেছি।
এবিষয়ে ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মো. ঈসহাক ভূঁঞা বলেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ কর্মসূচির পর চাকসুর তফসিল ঘোষণার তারিখ দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি একটি ছাত্র সংগঠন চাকসুকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, গত দুই-একদিন ধরে যেটা আমরা দেখছি, তার বিরুদ্ধেই আজকে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি।আমরা দেখেছি একটি দল বিভিন্ন অযৌক্তিক ইস্যু টেনে চাকসু বানচালের চেষ্টা করছে। চাকসু বানচালের পাঁয়তারা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।
তফসিল ঘোষণার আগে দু'টি বড় ছাত্রসংগঠনের এধরণের কর্মকাণ্ডের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে চাকসু নির্বাচন সংশয় তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে চাকসুর ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান খুন হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসু বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর ছাত্রসংগঠনগুলোর মুখোমুখি অবস্থান, কয়েক দফা সংঘর্ষ ও উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় ৩৫ বছর চাকসু নির্বাচনের মুখ দেখেনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।