চট্টগ্রামে নির্মিত হচ্ছে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস, শিক্ষা কার্যক্রম কবে?
চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানাধীন হামিদচরে কর্ণফুলী নদীর তীরে ১০৬ দশমিক ৬৬ একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস। স্থায়ী ক্যাম্পাসে কবে নাগাদ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে সেটি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের এখন আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র এই পাবলিক মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রকল্প শেষ হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাঝে বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয় । এরপর দফায় দফায় বালু ভরাটের পর ২০২৪ সালের ৪ মার্চ স্থায়ী ক্যাম্পাসের অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
আরডিপিপির তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। জুলাই-আগষ্ট অভ্যুত্থান, বন্যা পরিস্থিতি, বৈরী আবহাওয়া ও অন্যান্য কারণে চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে। নতুন করে সংশোধিত কাজ শেষ হওয়ার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির এই স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ এখন পর্যন্ত ৪০-৪৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মোট ১৯টি ভবনের মধ্যে ১৮টির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। একাডেমিক সার্কেল নির্মাণ কাজ রয়েছে টেন্ডারের অপেক্ষায়।
আরডিপিপির তথ্যমতে, টেন্ডার হওয়া কাজের মধ্যে রেস্ট হাউজের ভৌত অগ্রগতি ৩৮%, যানবাহন শেডের ভৌত অগ্রগতি ৪৫%, উপাচার্যের বাসভবনের ভৌত অগ্রগতি ৪৪%, স্টাফ ডরমেটরির ভৌত অগ্রগতি ৪৮%, ছাত্রী হল ভৌত অগ্রগতি ৩৫%, কেন্দ্রীয় মসজিদের ভৌত অগ্রগতি ৪৭%, একাডেমিক ভবনের ভৌত অগ্রগতি ৪০%, স্টাফ কোয়ার্টারের ভৌত অগ্রগতি ৪৬%, শিক্ষক/কর্মকর্তা ডরমেটরির ভৌত অগ্রগতি ৪৮%, শিক্ষক কর্মকর্তা কোয়ার্টারের ভৌত অগ্রগতি ৫৬%, প্রশাসনিক ভবন ভৌত অগ্রগতি ২৫%, ছাত্র হলের ভৌত অগ্রগতি ১৫% শেষ হয়েছে। এছাড়াও একাডেমিক সার্কেলের মূল্যায়ন চলছে আইকনিক এই স্থাপনাটির। ধারণা করা হচ্ছে মূল্যায়ন শেষে কমপক্ষে ২০২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে স্থাপনাটির কাজ শেষ হতে।
এদিকে প্রথম ফেজের ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাস কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হবে সেটির রোডম্যাপ তৈরির জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। ৩ মাসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদনের উপর নির্ধারিত হবে ২০২৬ সালে ক্যাম্পাস কিভাবে কতটুকু স্থানান্তরিত হতে পারে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক কমডোর মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন জানান, ২০২৬ সালের জুলাই মাসেই স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাশ কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। তবে সেশন ভিত্তিক পরিকল্পনা করলে ২০২৬ সালের শেষে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা যাবে। ইতোমধ্যে ভবন গুলোর বিভিন্ন আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বৃক্ষরোপণ ও ঘাস লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় কাজ চলছে।
এছাড়াও সবগুলো ভবনের কাজ সম্পন্ন না হলেও অত্যাবশ্যকীয় ভবনগুলোর কাজ শেষ হলে স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাশ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। তন্মধ্যে এল শেপের একাডেমিক বিল্ডিং দুইটির মধ্যে একটির কাজ সম্পূর্ণরুপে শেষ করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্র হলের টেন্ডার কার্যক্রম বিলম্বিত হলেও পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছিল। এ কারণে দ্রুত ছাত্র হলের কাজ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রমতে, ২০২৬ এর জুলাইয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে চাইলে বিকল্প হিসেবে কাজ শেষ হওয়া অন্যান্য বিল্ডিংকে অস্থায়ীভাবে ছাত্র হল বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। সব কিছু বিবেচনায় ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ চট্টগ্রামের স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করা এখন সময়ের অপেক্ষা।