১৮ জুন ২০২৫, ১৪:২৪

ঢাবির বাজেটে শিক্ষার্থীদের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটেনি: ছাত্রফ্রন্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রফ্রন্টের লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার (১৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং এর পরের দিন প্রকাশ ঘোষণা করা হয়। এই বাজেট খুবই অপর্যাপ্ত, এতে শিক্ষার্থী স্বার্থের যথার্থ প্রতিফলন ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 

আজ ‍বুধবার (১৮ জুন) সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক আকাশ আলী এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, এই বাজেট খুবই অপর্যাপ্ত, এতে শিক্ষার্থী স্বার্থের যথার্থ প্রতিফলন ঘটেনি, যা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সকল খাতের মতো শিক্ষা খাতেও সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল। শিক্ষা খাতে সংস্কার আনতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু আমরা এর উল্টোটা দেখতে পাচ্ছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত বাজেটে যথাযথ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপেক্ষিত হয়েছে গবেষণা, আবাসন, খাদ্য, চিকিৎসা, পরিবহনসহ শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতগুলো। যেমন: ১ কোটি টাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তায় ব্যয় হবে। যা মোট বাজেটের প্রায় শূন্য দশমিক এক শূন্য (০.১০%) শতাংশ। শিক্ষার্থী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ সকল খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে না বাড়ায় একজন শিক্ষার্থীর জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জন দিন দিন ব্যয়বহুল হতে থাকবে। মূল্যস্ফীতির বাজারে এই বর্ধিত ব্যয় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকেই অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক কষ্টের দিকে ঠেলে দিবে।

তারা আরও বলেন, উচ্চশিক্ষা খাত সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করে এবার কমানো হয়েছে গবেষণা খাতে বরাদ্দ। অথচ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করা। এজন্য দরকার গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ। কিন্তু নতুন বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা কিনা মোট বাজেটের মাত্র ২.০৮ শতাংশ। যা গতবছরের তুলনায় কম, গতবছর ছিল ২.১২ শতাংশ। এটি নিতান্তই অপ্রতুল। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতাকেই প্রমাণিত করে। গবেষণা খাতে এই অপ্রতুল বরাদ্দের ভবিষ্যৎ ফলাফল অন্ধকারময়।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করছে ঢাবি প্রশাসন

নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক এবং মানবিক অধিকার। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য এ অধিকার নিশ্চিত করতে বাধ্য। কিন্তু আমরা এর উল্টোটা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দেওয়ার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষা সংকোচনের পথে হাঁটছে, উচ্চশিক্ষা থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত করছে। অন্যদিকে যথাযথ বরাদ্দ না দেওয়ার মধ্য দিয়ে পুরো উচ্চশিক্ষা খাতকে বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে। নব্য উদারনীতিবাদী প্রক্রিয়ায় শিক্ষার বেসরকারীকরণ চলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দের হার কমানো হচ্ছে। এবারও বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে গৃহীত ইউজিসির কৌশলপত্রের পরামর্শ মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা, যা ২৩-২৪ বাজেটে ছিল ৮৫ কোটি টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর উপায় হচ্ছে বেতন, আবেদন ফি, ভর্তি ফি, উন্নয়ন ফি সহ নানা রকমের ফি বাড়ানো এবং নতুন নতুন ফি আরোপ করা, নানান রকমের বাণিজ্যিক কোর্স চালু, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অবকাঠামো (ক্যান্টিন, খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম ইত্যাদি) ভাড়া দেওয়া এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান নেওয়া যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতার পরিপন্থি।

‎নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নির্ধারণ না করার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং গবেষণাসহ শিক্ষা ও শিক্ষার্থী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের ৬৪৮ কোটি ২৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় হবে হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও পেনশনে। যা মোট বাজেটের প্রায় ৬২ শতাংশ। এর মধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ, ভাতায় ২১৫ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার এবং পেনশন ও অবসর সুবিধায় ১৩৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। 

মোট বাজেট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ৮৮৩ কোটি চার লাখ টাকা দেবে। এ ছাড়া ঢাবি উৎস থেকে ৯০ কোটি টাকা আসবে। ফলে ঘাটতি থাকবে ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এক হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেটের মোট ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বেশি।