রাবিতে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’র সংবাদ সম্মেলন, আন্দোলনের ঘোষণা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০১৩ সালের শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিচারিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে এবং ‘ইন-জাস্টিস’-এর বিচার দাবিতে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। মঙ্গলবারের (২৭ মে) এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচির একপর্যায়ে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।
বুধবার (২৮ মে) বেলা ১১টায় গতকালের ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
সংবাদ সম্মেলনে শাহবাগবিরোধী ঐক্যর আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম জানান, তথাকথিত গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে বামপন্থী-শাহবাগী গোষ্ঠী গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মশাল মিছিলের ডাক দেয়। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি কিছু সময় দেরিতে শুরু করা হয়। বামপন্থী গোষ্ঠীর কর্মসূচি হচ্ছে না জেনে পরিবহন চত্বরের একটি ফাঁকা জায়গায় ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ সমবেত হয়।
তিনি বলেন, পরিবহন চত্বরে আসার পর যখন বিভিন্ন সংগঠক ও নেতারা বক্তব্য রাখছিলেন, ঠিক তখনই পেছন থেকে বাম সংগঠনের গুটি কয়েক মশালধারী তাদের শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার, জামাআত-শিবির’ বলে কটূক্তি করে। তারা স্লোগান দিয়ে বারবার মশাল নিয়ে তেড়ে আসে এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে। একপর্যায়ে 'শাহবাগবিরোধী ঐক্য'-এর শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করা হয়, যা তাদের এক সহযোদ্ধা তারেকের গায়ে লাগে। এরপরই মূলত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে।
রাকিবুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, বাম সংগঠনের পূর্বঘোষিত মিছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হওয়ার কথা থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তা শুরু হয় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শাহবাগবিরোধী ঐক্যর নেতারা পরিস্থিতি শান্ত করে অন্য দিকে সরে গেলে বাম সংগঠনের সদস্যরা পুনরায় তাদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এ সময় তাদের গায়ে জ্বলন্ত মশাল পর্যন্ত ছুঁড়ে মারা হয়, এতে তাদের কয়েকজন কর্মী আহত হন। উভয়পক্ষের বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি থেকে সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য 'শাহবাগবিরোধী ঐক্য'র কয়েকজন সংগঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলেও দাবি করা হয়।
রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কিছু গণমাধ্যম নির্লজ্জভাবে 'লাল সন্ত্রাসীদের' পক্ষাবলম্বন করে তাদের ওপর শিবিরের হামলা এই মর্মে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে শাহবাগবিরোধী প্রায় সব ধরনের রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : শিক্ষকদের মে মাসের বেতন-ভাতা কবে, জানাল মাউশি
এক বিবৃতিতে শাহবাগবিরোধী ঐক্যর পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৩ সালে শাহবাগে সৃষ্ট মবের পরিপূর্ণ বিরোধিতা করেছিল ছাত্রদল এবং শাহবাগবিরোধী ঐক্যের অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে তারা ছাত্রদলকে পাশে পাওয়ার আশা করেছিল। কিন্তু শাহবাগ নিয়ে ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থান চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। এই শাহবাগই বিএনপির সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ এর অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীদের 'ডিহিউম্যানাইজ' করে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা সাজিয়ে ফাঁসির সম্মতি উৎপাদন করেছিল।
‘শাহবাগতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা
শাহবাগবিরোধী ঐক্যর আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম বলেন, শাহবাগে মব তৈরি করে দেশে হাসিনার ফ্যাসিবাদের বীজ রোপণ করেছিল ‘লাল সন্ত্রাসীরা’। ইনসাফ ও ন্যায়ের লড়াইয়ে তারা গতকাল রাবিতে সেই ‘শাহবাগতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে একত্র হয়েছিলেন।
তিনি মনে করেন, শাহবাগই মূলত হাসিনাকে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে সহযোগিতা করেছে। ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে 'রাজাকার, জামাআত-শিবির' ট্যাগ দিয়ে যারা দেশের নাগরিকদের নাগরিক অধিকার ও মানবিক অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলতে থাকবে। তবে এ লড়াই হবে আইনি লড়াই, বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং গণতান্ত্রিক লড়াই।
শাহবাগবিরোধী ঐক্য ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ শাহবাগবিরোধী সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে 'শাহবাগী সন্ত্রাসী বাহিনী' আর কোনোভাবে ক্যাম্পাস তথা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।
এক দফা দাবির জোরদার
রাকিবুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, গত রাতের ঘটনার রেশ ধরে দেশব্যাপী শাহবাগের বিচারের এক দফা দাবি আরও জোরালো হবে। তারা শাহবাগের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।